এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ
অনূর্ধ্ব-২০ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ী দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়দের না পাওয়ায় এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না কোচ মারুফুল হক।
Published : 18 Sep 2024, 04:50 PM
এএফসি অনুর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্রস্তুতি, লক্ষ্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন হলো কমই। বরং প্রশ্ন বেশি উঠল বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড় না ছাড়া ইস্যু নিয়ে। কোচ মারুফুল হক কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেন, কিছু এড়িয়ে গেলেন। লক্ষ্যের প্রশ্নে নানা প্রতিকূলতা তুলে ধরে শুধু বললেন, ভালো ফলের চেষ্টা করবে তার দল।
কদিন আগে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ বাংলাদেশ জিতেছিল মারুফুলের হাত ধরে। সেই সাফল্য নিয়ে ফেরার পর এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে প্রস্তুতিতে কোমর বেঁধে নেমে পড়ার কথা ছিল তার। কিন্তু ভুটানের বিপক্ষে জাতীয় দলের প্রীতি ম্যাচ, বসুন্ধরা কিংসের খেলোয়াড়দের ছুটি মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ দল নিয়ে মারুফুল প্রস্তুতিই নিতে পেরেছেন মাত্র তিন দিন!
বয়সভিত্তিক এই দলে কিংসের ছয় জনকে চেয়েছিলেন মারুফুল। এদের মধ্যে রাব্বী হোসেন রাহুলের চোট রয়েছে, মজিবুর রহমান জনি অসুস্থ। চন্দন রায় ও রিমন হোসেনকে পরে ছাড়তে চেয়েছিল তাদের ক্লাব। মোহাম্মদ আসিফ ও মহসীন আহমেদ ক্যাম্পে যোগ দিলেও দুদিন অনুশীলনের পর তাদেরকে ক্লাবে ফিরে যেতে বলেন মারুফুল। শেষ পর্যন্ত কিংসের খেলোয়াড় ছাড়াই দল ঘোষণা করেন তিনি। এ নিয়ে শুরু হয় টানাপোড়েন, তীর্যক মন্তব্যে করতে থাকে দুই পক্ষই।
এর মধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়ে রুস্তম হোসেন দুখুর চোটে দলের শক্তি কমেছে আরও। সব মিলিয়ে মারুফুল দলের অবস্থা তুলে ধরে বললেন, বাছাই পেরুতে পারব, এমন কথা বলতে পারছি না।
“৭ জন খেলোয়াড় ডেঙ্গু আক্রান্ত। ১২-১৩ জন নিয়ে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। জাতীয় দলে আমাদের চার জন খেলোয়াড় ছিল, ওরা ফিরে আসার পর আমাকে জানানো হয়েছিল, ওদের তিন দিনের ছুটি দেওয়া হবে। যারা বসুন্ধরা কিংসের ছিল, তাদের ক্লাব তিন দিনের ছুটি দিয়েছিল। আমরাও তাদের যে দুজন খেলোয়াড় ছিল, তাদেরও ছুটি দিয়েছিলাম। কথা হয়েছিল, যাদের প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন করা হয়েছে, তারা ১৩ তারিখে সবাই যোগ দিবে। ওরা যোগ দিতে পারেনি, এটা ক্লাবের পলিসি। আমি পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড পেয়েছি তিন দিন হলো।”
“১৫, ১৬, ১৭ (সেপ্টেম্বর) পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড পেয়েছি অনুশীলনের জন্য। এটা ফুটবল, ক্রিকেট বা ও ইনডিভিজ্যুয়াল খেলা নয় যে, সবাই এসে এসে যোগ দিবে বা ম্যাচের দিন এসে যোগ দিয়ে খেলে ফেলবে। ফুটবলে একটা কম্বিনেশনের প্রয়োজন আছে। একটা কম্বিনেশন করতে আমি মনে করি, কমপক্ষে… সাত দিনও যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে এমন একটা যুব দলের ক্ষেত্রে।”
বয়সভিত্তিক সাফ জয়ে দারুণ অবদান ছিল আসিফের। মূল গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণের চোটে পোস্ট সামলেছিলেন তিনি। সাফে দারুণ খেলা আসিফকে অনুশীলনে ফিট মনে হয়নি বলে তাকে বাদ দিয়েছেন বলে জানালেন মারুফুল।
“আসিফকে আমি পাইনি, তাকে রেখে যাচ্ছি। আসিফ দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় এবং আপনার কথা অনুযায়ী, ওর জন্য আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। কোচ হিসেবে আমি এটা অবশ্যই স্বীকার করি। কিন্তু একজন খেলোয়াড় সবশেষ ম্যাচ খেলেছে ২৮ অগাস্ট, তাকে আমি ক্যাম্পে পেয়েছি ১৫ সেপ্টেম্বর, কতগুলো দিন? দিনগুলো দেখুন। এই ১৮ দিন খেলোয়াড়টি আমার সংস্পর্শে নেই। তাকে যখন আমি পেয়েছি, আমি সেই আসিফকে দেখিনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, ম্যাচ ফিটনেসে সমস্যা আছে। মহসীনের ক্ষেত্রেও তাই। আমার মনে হয়েছে, যারা আছে, তারা ওদের চেয়ে ম্যাচ ফিট।”
বলতে গেলে ‘জোড়াতালি’ দিয়ে দল গুছিয়ে বৃহস্পতিবার ভিয়েতনাম যাচ্ছেন মারুফুল। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সিরিয়া, ভিয়েতনাম, ভুটান ও গুয়াম। প্রথম ম্যাচ সিরিয়ার বিপক্ষে, ২১ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ, সেখানে পৌঁছে গুছিয়ে নেওয়ার সময়ও মিলবে না। মারুফুলের কণ্ঠে ঝরল তাই আক্ষেপ।
“আজ রাতে আমরা রওনা দিব। কাল স্থানীয় সময় ২টায় পৌঁছাব। প্রথম ম্যাচ ২১ তারিখ। প্রতিটি দলের গুরুত্বপূর্ণ সেশন থাকে ম্যাচের আগের দুই দিন। ম্যাচের একদিন আগে আমরা অনুশীলন করতে পারব না। ম্যাচের আগের দিন হয়ত ১ ঘণ্টা অনুশীলন করতে পারব। এ কারণে আমি অনেক কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে পারিনি। আমি কাউকে বোঝাতে পারিনি, জাতীয় দলের প্রীতি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ নাকি এই টুর্নামেন্ট গুরুত্বপূর্ণ।”
“সাফ অনূর্ধ্ব-২০ এর আগে আমরা ১৫ দিন সময় পেয়েছিলাম কম্বিনেশনের জন্য, ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করেছিল বলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। এই টুর্নামেন্ট আরও কঠিন। এ দিকটাও দেখতে হবে। আমরা আগের টুর্নামেন্ট খেলেছি সাফ অঞ্চলে, এবার আমরা যাচ্ছি এশিয়ান অঞ্চলে।”
২০০২ সালে সবশেষ এই প্রতিযোগিতার মূল পর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার তেমন আশা দেখালেন না মারুফুল।
“যদি নেপাল থেকে ফেরার পর আমরা নিবিড় অনুশীলন করতে পারতাম, দলের কম্বিনেশন নিয়ে আরও কাজ করতে পারতাম, তাহলে হয়ত আপনাদের কথা দিতে পারতাম এই টুর্নামেন্টে আমরা কোয়ালিফাই করব। তবে আমরা চেষ্টা করব।”
“আমি ভিয়েতনাম, ভুটানের খেলা খুব কাছ থেকে দেখেছি, গুয়াম আমাদের থেকে একটু পিছিয়ে। আমরা ভিয়েতনাম ও সিরিয়াকে আমাদের মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছি। তাদের খেলা দেখেছি, এবং তাদেরকে হারানো সম্ভব। তাদের কাছ থেকে ৩ বা ১ পয়েন্ট পাওয়া আমাদের এই দলের জন্য কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু, সব ঘাটতি মিলিয়ে আমি এখন কোনো আশ্বাস দিতে পারছি না।”
কোচ তেমন আশা না দেখালেও অধিনায়ক আশরাফুল হক আসিফ আশাবাদী।
“আসলে আমরা গত যে টুর্নামেন্ট খেলেছি (সাফ অনূর্ধ্ব-২০), সেখানে আমরা কম্বাইন্ড টিম ছিলাম। ওই দলের চার-পাঁচ জন খেলোয়াড় এই দলে নেই। নতুন যারা এসেছে, আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি, ইনশাল্লাহ আমরা কোয়ালিফাই (করব)…চার-পাঁচ জন না থাকায় একটা শুন্যতা তৈরি হয়েছে, নতুন যারা এসেছে তারা ইনশাল্লাহ ওই গ্যাপটা পূরণ করবে বলে আমি মনে করি।”