উন্নতির ধারাবাহিকতায় নিজেকে চেনালেন এমবাপে

লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতো তারকা যেটা পারেননি, মাত্র ১৯ বছর বয়সে সেটা করেছেন কিলিয়ান এমবাপে। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে গোল করেছেন ফরাসি এই ফরোয়ার্ড। গত শনিবার রাতে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফ্রান্সের ৪-৩ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে জোড়া গোল করার পর অনেক তারকার সঙ্গে তুলনা হচ্ছে ফ্রান্সের ‘বিস্ময় বালক’ এমবাপের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2018, 12:53 PM
Updated : 1 July 2018, 12:57 PM

১৯৫৮ বিশ্বকাপে সুইডেনের বিপক্ষে ব্রাজিলের ৫-২ ব্যবধানে জেতা ফাইনালে জোড়া গোল করেছিলেন পেলে। এতদিন বিশ্বকাপে কোনো টিনএজারের একাধিক গোলের সেটাই ছিল একমাত্র কীর্তি। আর্জেন্টিনার জালে দুই গোল করে ৬০ বছর পর পেলের কীর্তিতে ভাগ বসিয়েছেন এমবাপে। এরপর থেকে ব্রাজিলের সাবেক ফরোয়ার্ড রোনালদোর সঙ্গে তার তুলনা করছেন অনেক ফুটবল পণ্ডিত।

ইংল্যান্ডের সাবেক ফরোয়ার্ড গ্যারি লিনেকার যেমন বলেছেন, “আগেই বলেছিলাম, কিলিয়ান এমবাপে হবে বিশ্ব ফুটবলের পরবর্তী সুপারস্টার।”

দানবীয় গতি এবং নিখুঁত ফিনিশিং এমবাপেকে রাশিয়ার আসরে নিশ্চিতভাবেই প্রতিপক্ষের জন্য ভয় পাওয়ার মতো খেলোয়াড় বানিয়ে দিয়েছে। ২০১৫ সালে পেশাদার ফুটবলে অভিষেকের পর থেকে উন্নতির ধারাবাহিকতায় থাকা এই তরুণ রাশিয়ার আসরে এরই মধ্যে ৩ গোল করেছেন। তবে প্রশংসা, তুলনার স্রোতে ভেসে যাচ্ছেন না পিএসজির এই ফরোয়ার্ড। মাথা রাখছেন ঠাণ্ডা।

“আমি ‍খুবই খুশি। পেলের পর দ্বিতীয় টিনএজার হওয়াটা তৃপ্তিদায়ক। পেলে ভিন্ন ক্যাটেগরির। তবে তাদের সঙ্গে থাকতে পারাটা ভালো।”

“আমি সব সময় যেটা বলি, সেটা ইতোমধ্যে বলেছি, বিশ্বকাপে আপনি সব উচুঁ পর্যায়ের খেলোয়াড় পাবেন। তাই আপনি কি করতে পারেন এবং আপনার কি সামর্থ্য সেগুলো দেখানোর জন্য এটা একটা সুযোগ। এটা দেখানোর জন্য বিশ্বকাপের চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই।”

ফ্রান্সের অধিনায়ক উগো লরিস জানান, রাশিয়ায় এসে ঠিক এই কাজটিই করেছেন এমবাপে।

“আমি মনে করি, এমবাপে সারা বিশ্বের সামনে নিজেকে তুলে ধরেছে।”

আর্জেন্টিনা ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে চার মিনিটের মধ্যে ‍গোল দুটি করেন এমবাপে। অতোঁয়ান গ্রিজমানের স্পট কিক থেকে পাওয়া গোলের পেছনের কারিগরও তিনি। দানবীয় গতিতে ৭০ মিটার দৌড়ে ডি-বক্সে ঢুকে পেনাল্টিটি আদায় করেছিলেন পিএসজির এই ফরোয়ার্ড।

মেসিদের বিপক্ষে দারুণ পারফম্যান্সের পর এমবাপের মাটিতে পা রাখা দেখে খুশি ফরাসি ফরোয়ার্ড ফ্লোরিয়ান থাউভিন। পেনাল্টি আদায় করা ওই দৌড়ের প্রসঙ্গ টেনে মজা করে তিনি বলেন, “আমি বিস্মিত হয়ে ভাবছিলাম সে স্কুটার চালাচ্ছে নাকি।”

“ম্যাচের পর আমি তাকে ঠাণ্ডা দেখলাম। যেন কিছুই ঘটেনি এমন একটা ব্যাপার।”

তারপরও ফ্রান্সের এই ‘বিস্ময় বালককে’ কোয়ার্টার-ফাইনালে আরও বেশি কিছু দেখাতে হবে। সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়নদের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে। এমবাপেকে খেলার জন্য অতটা জায়গা উরুগুয়ে দেবে না, যতটা কাজানে আর্জেন্টিনা দিয়েছিল।

কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচের আগে গ্রিজমান অবশ্য এমবাপেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। কেননা, উরুগুয়ের হোসে মারিয়া হিমেনেস ও দিয়েগো গদিন এই দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আতলেতিকো মাদ্রিদে তার সতীর্থ। থাউভিনেরও মনে হচ্ছে গ্রিজমানের পরামর্শ কাজে লাগবে।

“একটা বিষয় নিশ্চিত, অতোঁয়ানের উপদেশ হবে মহামূল্যবান। সে তাদের (উরুগুয়ের) কিছু খেলোয়াড়কে জানে।”

“গদিন এবং হিমেনেস আতলেতিকোয় একসঙ্গে খেলে। তারা পরস্পরকে নিখুঁতভাবে জানে এবং তারা খুবই কম ভুল করে। তারা কেবল একটু ধীর গতির হতে পারে। তাই তাদের পেছনে আমাদের খেলার জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া দরকার।”

উরুগুয়ে ম্যাচে এমবাপের ওপর বাড়তি প্রত্যাশার চাপ দিতে রাজি নন গ্রিজমান। তবে অস্কার তাবারেসের দলের বিপক্ষে লড়তে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন এই ফরোয়ার্ড।

“কোয়ার্টার-ফাইনালে অবশ্যই এমবাপের কাছে অত বেশি আশা করা ঠিক হবে না। কেননা, উরুগুয়ে তার জন্য প্রস্তুত থাকবে।”

“টেকনিক্যালি কোচ গতকাল (আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ম্যাচে) নিখুঁত কাজ করেছেন। তাই আমরা জানি (উরুগুয়ে ম্যাচে) আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত থাকব।”