ইতিহাস গড়া ইয়ামালের সঙ্গে মেসির মিল দেখছেন বার্সা কোচ

১৫ বছর বয়সে বার্সেলোনার হয়ে অভিষিক্ত এই ফরোয়ার্ড কোচ শাভি এর্নান্দেসের চোখে ‘স্পেশাল’ এক প্রতিভা। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 April 2023, 03:54 AM
Updated : 30 April 2023, 03:54 AM

বৃষ্টিভেজা রাতে ৮৮ হাজার দর্শকের গান আর স্লোগানে কাম্প নউ ছিল উত্তাল। সেই গ্যালারিতেই নতুন জোয়ার এলো, যখন মাঠে নামলেন লামিন ইয়ামাল। শরীর আর চেহারায় কৈশোরের ছাপ তার। বয়সটাও তেমনই। স্রেফ ১৫ বছর! মাঠে অবশ্য সেই বয়সটা বোঝা গেল না। বার্সেলোনার হয়ে অভিষেক ম্যাচে স্বল্প উপস্থিতিই মাতিয়ে রাখলেন তিনি দুর্দান্ত খেলে। মুগ্ধ কোচ শাভি এর্নান্দেস বললেন, এই ইয়ামাল এক ‘স্পেশাল’ প্রতিভা। 

লা লিগায় শনিবার রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে বার্সেলোনার ৪-০ গোলের জয়ে ইতিহাস গড়েন ইয়ামাল। ৮৩তম মিনিটে গাভির বদলি হিসেবে নামানো হয় তাকে। ১৫ বছর ২৯০ দিন বয়সে মাঠে নেমে বার্সেলোনার সুদীর্ঘ ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার তিনিই! স্পেনের শীর্ষ  ফুটবলে তার চেয়ে কম বয়সে খেলেছেন আর স্রেফ চার জন। 

শুধু বয়সের কারণেই নয়, আলোচনার জন্ম দেন ইয়ামাল পারফরম্যান্সেও। মাঠে নামার পরপরই একটি গোল পেতে পারতেন তিনি। দারুণ দক্ষতায় যা বাঁচিয়ে দেন প্রতিপক্ষ গোলকিপার। একটি গোলে সহায়তাও থাকতে পারত। তবে তার অসাধারণ এক চিপ প্রতিপক্ষ গোলকিপারের সামনে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি উসমান দেম্বেলে। 

সব মিলিয়ে মিনিট দশেকের উপস্থিতিতে ১২ বার বলে স্পর্শ করেন তিনি। মাঠে তার বিচরণে ছিল না কোনো জড়তা, ছিল না ভয়ডরের কোনো ছাপ। শেষ বাঁশি বাজার পর গোটা স্টেডিয়াম তাকে অভিবাদন জানায়। 

ইয়ামাল আলোচনায় ছিলেন কিছুদিন ধরেই। বার্সেলোনার একাডেমিতে তার প্রতিভার সুবাস ছড়িয়ে পড়েছে বেশ আগে থেকেই। তার বাবা মরক্কোর, মা ইকুয়েটোরিয়াল গিনির। তবে তার জন্ম স্পেনেই, ২০০৭ সালের ১৩ জুলাই। 

বার্সেলোনার বিখ্যাত একাডেমি লা মাসিয়ায় তার পা পড়ে ছোট্ট বেলাতেই। সেই থেকে বার্সেলোনার সম্পদ হিসেবে বেড়ে উঠেছেন। তার মোহনীয় ড্রিবলিং, দুর্দান্ত সব স্কিল ও বাঁ পায়ের কারুকাজের নানা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। তার সম্পর্কে শুনে ও তাকে দেখে  প্রতিভায় মজে যান শাভি এর্নান্দেসও। গত সেপ্টেম্বরে তাকে মূল দলের সঙ্গে অনুশীলনের সুযোগ করে দেন বার্সেলোনা কোচ। তখন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, ইয়ামালকে দারুণ মনে ধরেছে শাভির। 

সেই ধারাবাহিকতায় এবার অভিষেক হয়ে গেল স্পেনের শীর্ষ প্রতিযাগিতায়। অথচ তার সঙ্গে এখনও পেশাদার চুক্তিও হয়নি ক্লাবের। 

শুধু বার্সেলোনার একাডেমি বা বয়সভিত্তিক দলগুলিই নয়, ইয়ামাল এর মধ্যে খেলে ফেলেছেন স্পেনের অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭ ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। আক্রমণভাগের নানা জায়গায় খেলতে পারার দক্ষতাও তিনি মেলে ধরেছেন এর মধ্যেই। সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে তো বটেই, অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, উইঙ্গার হিসেবেও তিনি খেলতে পারেন। 

অভিষেক ম্যাচে স্বল্প সুযোগেই নিজের প্রতিভার ঝলক মেলে ধরেছেন ইয়ামাল। ম্যাচ শেষে তাকে স্তুতির জোয়ারে ভাসালেন কোচ শাভি এর্নান্দেস। 

“আমি ওকে বলেছিলাম মাঠে নেমে যা ইচ্ছা চেষ্টা করে দেখতে এবং সে তা করেছে। ১৫ বছর বয়সে… চিন্তা করে দেখুন! সে স্পেশাল একজন। সে গোলও পেতে পারত… দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছে। সে দেখিয়ে দিতে পেরেছে যে তার ভেতর কী আছে। তার প্রতিভা প্রকাশ্যই। তার কয়েকটি পাস ছিল দুর্দান্ত।” 

লা মাসিয়ায় কোনো বিস্ময় বালকের আবির্ভাব মানেই অবধারিতভাবে লিওনেল মেসির নাম চলে আসা। ইয়ামালের মধ্যে এই বয়সের মেসির ছাপ দেখতে পাচ্ছেন অনেকেই। অনেকেই আবার মিল দেখছেন লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা বার্সেলোনার আরেক প্রতিভা আনসু ফাতির সঙ্গে। 

ইয়ামালের অভিষেক ম্যাচের পর এই দুজনের সঙ্গে তুলনা নিয়ে প্রশ্নও হলো শাভি এর্নান্দেসের কাছে। তাকে নিয়ে সেই উচ্ছ্বাসের পালে জোর হাওয়া দিলেন বার্সেলোনা কোচ। 

“হ্যাঁ, সে অনেকটা ওদের মতো, কারণ আক্রমণভাগে ওর প্রতিভা একদম সহজাত, যা এতটা খুঁজে পাওয়া বিরল। তাকে স্রেফ ১৫ বছর বয়সী মনে হয় না, আরও অনেক পরিণত লাগে খেলা দেখে। সে তৈরি (শীর্ষ পর্যায়ের জন্য) এবং অনুশীলন খুব ভালো করছে।” 

“যে ১০ মিনিট সে মাঠে ছিল, আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলেছে, যা আমরা দেখতে চাই। এই ক্লাবে সে নিজের ছাপ রাখতে পারে।”

১৫ বছর বয়সী একজন ফুটবলার স্পেনের শীর্ষ আসরে গ্যালারিভরা দর্শকের সামনে খেলছেন, এটাই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না ইয়ামালের বার্সেলোনা সতীর্থ রাফিনিয়ার।

"বেঞ্চে বসে আমরা এটা নিয়ে কথা বলছিলাম... আমার বয়স যখন ১৫, আমার মনে হয়, তখন পাড়ার দলগুলিতে খেলছিলাম। আজকে যখন তাকে মাঠে নামতে দেখলাম, এত এত দর্শকের সামনে... এটা স্রেফ অবিশ্বাস্য।"