ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ
নিজেদের ফুটবল কৌশল বদলে ফেলা স্পেনকে তেমন ভাবাতেই পারেনি ক্রোয়েশিয়া।
Published : 16 Jun 2024, 12:05 AM
আসরের প্রথম হাইভোল্টেজ ম্যাচ, মৃত্যুকূপের লড়াই। ম্যাচ শুরুর আগে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা উঠল তুঙ্গে। কিন্তু মাঠে তার কোথায় কী! শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চেপে ধরল স্পেন, প্রথমার্ধেই তিনবার জালে বল পাঠাল তারা। শেষ দিকে ঘুরে দাঁড়ানোর একটা সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারল না ক্রোয়েশিয়া। বড় ব্যবধানের জয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে যাত্রা শুরু করল রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা।
বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে শনিবার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচটি ৩-০ গোলে জিতেছে স্পেন। প্রথমার্ধেই গোল তিনটি করেন আলভারো মোরাতা, ফাবিয়ান রুইস ও দানি কারভাহাল।
অধিকাংশ সময় পজেশন ধরে রেখে, ছোট ছোট পাসে প্রতিপক্ষকে নাড়িয়ে দেওয়ার কৌশল পাল্টে ফেলেছে স্পেন। তবে আক্রমণে আগের মতোই তারা ভীষণ ক্ষুরধার।
এ মাসেই দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ১০টি গোল করা স্প্যানিশরা এদিন প্রায় ৪৫ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখে গোলের জন্য ১১টি শট নিয়ে পাঁচটি লক্ষ্যে রাখতে পারে, যার তিনটিই সফল। বিপরীতে ১৬টি শট নিয়ে, পাঁচটি লক্ষ্যে রেখে পুরোপুরি ব্যর্থ ক্রোয়েশিয়া।
“তাদের দলে সেন্টার ফরোয়ার্ড আছে, আলভারো মোরাতা আছে, দুই উইংয়ে গতিময় খেলোয়াড় আছে”- আগের কৌশল বদলে ফেলা এই স্পেন দলকে নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন ক্রোয়েশিয়া কোচ জ্লাতকো দালিচ। কিন্তু মাঠে নেমে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে পারল না তার দল, পারল না ঘর আগলে রাখতে।
প্রথমার্ধেই তিন গোল হজম করে লড়াই থেকে একরকম ছিটকে পড়ে ক্রোয়াটরা। স্প্যানিশদের গোল উৎসবের শুরু ২৯তম মিনিটে রুইস ও মোরাতার দারুণ বোঝাপড়ায়। পিএসজির মিডফিল্ডার রুইস মাঝমাঠ থেকে রক্ষণচেরা দারুণ এক থ্রু পাস বাড়ান, আর বল ধরে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে কোনো সুযোগ না দিয়ে বক্সে ঢুকে নিচু শটে গোলটি করেন মোরাতা।
এই গোলে অনন্য এক কীর্তি গড়লেন অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার মোরাতা। প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইউরোর তিন আসরে নির্দিষ্ট একটি দলের বিপক্ষে গোল করলেন তিনি; ২০১৬ ও ২০২০ আসরেও ক্রোয়াটদের জালে পাঠিয়েছিলেন মোরাতা।
প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ৩১ বছর বয়সী তারকা এখন যৌথভাবে তৃতীয় স্থানে; তার সমান ৭টি করে গোল আছে অঁতোয়ান গ্রিজমান, অ্যালান শিয়েরারের। ১৪ গোল নিয়ে সবার ওপরে পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, দ্বিতীয় স্থানে কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনির গোল ৯টি।
তিন মিনিট পর নিজেই দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রুইস। পেদ্রির ছোট পাস ধরে বক্সে একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে নিচু শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি। বল সামনে আরেক জনের পায়ে লেগে সামান্য গতি পাল্টে ঠিকানা খুঁজে নেয়।
প্রথমার্ধে বল দখলে অনেকটাই এগিয়ে থাকা ক্রোয়েশিয়া এই সময়ে গোলের জন্য শটও নেয় বেশি; তাদের সাত শটের ২টি ছিল লক্ষ্যে, বিপরীতে স্পেনের ছয় শটের চারটি থাকে লক্ষ্যে। তবে ক্রোয়াটদের বেশিরভাগ প্রচেষ্টাই ছিল ধারহীন, প্রতিপক্ষকে খুব একটা ভাবাতে পারেনি তারা।
৪১তম মিনিটে সেরা সুযোগটি পায় ক্রোয়েশিয়া; কিন্তু ইয়োশকো ভার্দিওলের দূরের পোস্টে নেওয়া শটে খুব কাছ থেকে প্রয়োজনীয় টোকাটা দিতে পারেননি আন্তে বুদিমির।
বিরতির ঠিক আগে উল্টো আরেক গোল হজম করে বসে ক্রোয়েশিয়া। এদিন মাঠে নেমেই সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোয় অভিষেকের রেকর্ড গড়া লামিনে ইয়ামাল অসাধারণ এক ক্রস বাড়ান বক্সে, আর দারুণ স্লাইড শটে বল জালে পাঠান রেয়াল মাদ্রিদ ডিফেন্ডার কারভাহাল।
দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে এক আক্রমণেই কয়েকবার বল জালে পাঠানোর সুযোগ আসে ক্রোয়াটদের সামনে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয় তারা। ইয়োসিপ স্তানিসিচের কোনাকুনি শট রুখে দেন ডিফেন্ডার মার্ক কুকুরেইয়া, এরপর বুদিমিরের হেড ঠেকান গোলরক্ষক উনাই সিমোন।
শেষদিকে লড়াই নতুন মোড় নেওয়ার উপলক্ষ তৈরি হয়। ৭৮তম মিনিটে সতীর্থের ব্যাকপাস ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি স্পেন গোলরক্ষক সিমোন, হারিয়ে ফেলেন পজেশন। বল ধরে যখন শট নিতে যাবেন ব্রুনো পেতকোভিচ, তখনই তাকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রদ্রি।
অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড পেতকোভিচের স্পট কিক সিমোন ঝাঁপিয়ে রুখে দিলেও বল হাতে রাখতে পারেননি। সতীর্থের পা ঘুরে আসা বল এবার ঠিকই জালে পাঠান পেতকোভিচ; কিন্তু ভিএআরে মেলেনি গোল, অফসাইডে ছিলেন তিনি।
সুবর্ণ ওই সুযোগ নষ্টের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ২০১৮ বিশ্বকাপের রানার্সআপ ও গত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া। স্প্যানিশদের বিপক্ষে টানা দ্বিতীয় আসরে হারের তেতো স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। গতবার শেষ ষোলোয় তাদের হারিয়েছিল স্পেন।
গ্রুপের দ্বিতীয় রাউন্ডে আগামী বুধবার ক্রোয়েশিয়া খেলবে আলবেনিয়ার বিপক্ষে। আর জার্মানির সমান তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন পরদিন লড়বে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে।