ফেডারেশন কাপ
উত্তেজনাপূর্ণ ফাইনালে রেফারি জসীম আখতারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ম্যাচ শেষে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ।
Published : 22 May 2024, 07:50 PM
ম্যাচের ফল আর বিতর্কিত এক ঘটনার জেরে দুই মেরুতে দুই কোচ। বসুন্ধরা কিংস কোচ অস্কার ব্রুসনের কণ্ঠে প্রথমবারের মতো ‘ট্রেবল’ জয়ের উচ্ছ্বাস। অন্যদিকে, দারুণভাবে আশা জাগিয়েও না পারার হতাশা সঙ্গী মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদের। কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে রেফারি জসীম আখতারকেও ধুয়ে দিয়েছেন তিনি।
ময়মনসিংহের রফিকউদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে বুধবার মোহামেডানকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফেডারেশন কাপের শিরোপা জিতে নেয় বসুন্ধরা কিংস। এ নিয়ে এক মৌসুমে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ ও প্রিমিয়ার জিতে ‘ত্রিমুকুট’-এর বৃত্ত পূরণ করল তারা।
২০০৭ সালে পেশাদার লিগ শুরুর পর থেকে একমাত্র ঘরোয়া ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বাদ পেয়েছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, ২০১২-১৩ মৌসুমে। কিংস বসল তাদের পাশে। ফাইনালে প্রথমে অবশ্য এমানুয়েল সানডের গোলে পিছিয়ে পড়েছিল তারা। শেষ দিকে মিগেল ফিগেইরা দামাশেনো সমতার স্বস্তি এনে দেওয়ার পর, অতিরিক্ত সময়ে জাহিদ হোসেনের গোলে বাজিমাত করে কিংস।
কিংসের মতো ব্রুসনও প্রথমবারের মতো পেলেন এক মৌসুমে তিন শিরোপা জয়ের স্বাদ। জানালেন, পরিশ্রমের পথ বেয়ে এসেছে এই সাফল্য।
“খুবই শিহরণ জাগানীয়া ম্যাচ ছিল। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচ ছিল। বিশেষ করে আমরা প্রথম গোল হজমের পর অনেক আবেগ কাজ করছিল আমাদের মধ্যে। কিন্তু আমরা শান্ত ছিলাম … মোরসালিন (শেখ) দারুণ করেছে; শেষ দিকে আক্রমণের লিংকগুলো সে তৈরি করে দিয়েছে। সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, যেটা আমাদের আক্রমণ শাণাতে খুব কাজে দিয়েছিল। ব্রিলিয়ান্ট একটা ম্যাচ হয়েছে। আমার মনে হয়, নিখুঁত ফুটবল ম্যাচ হয়েছে, টোটাল ফুটবল হয়েছে। ময়মনসিংহে অনেক সমর্থক আমাদের সমর্থন করতে এসেছেন। পুরো মৌসুমে দেখার মতো সেরা দৃশ্য ছিল এটি।”
“প্রতিদিন মাঠে আমরা যেটা করেছি, তারই সিঁড়ি বেয়ে ট্রেবল এসেছে। যে নিবেদন, ইচ্ছাশক্তি আমাদের ছিল, ট্রেবল এসেছে এগুলোর সাথে আমাদের সুন্দর কাজের সূত্র ধরে। কিংস কর্তৃপক্ষ, আমাদের টিম স্টাফ, বল বয়- সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আমরা ভিন্ন একটি দল।”
আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণের রোমাঞ্চ ছাড়াও রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে মাঠে, ডাগআউটে। ব্রুসন অবশ্য অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো নয়, ম্যাচ জুড়ে নিজেদের পারা, না পারা নিয়ে কথা বলতেই আগ্রহী বেশি।
“এই ম্যাচে বলার মতো অনেক মুহূর্ত ছিল। বিশেষ করে প্রথমার্ধে আমরা তৈরি করা তিনটি সুযোগের কোনোটারই সদ্ব্যবহার করতে পারিনি। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্যে প্রতিপক্ষকে শেষ করে দিতে পারিনি। মোহামেডান দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যে গোল পেল, সেটা একটা টার্নিং পয়েন্ট ছিল। কিন্তু আমরাও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি।”
“মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, অনেক সুযোগ তৈরি করতে শুরু করলাম শেষ ২০-২৫ মিনিটে। ফলও এলো। আপনারা দেখেছেন অতিরিক্ত সময়ে আমরা জিততে চেয়েছিলাম। আমরা ভালো দল ছিলাম এবং চেয়েছিলাম ১২০ মিনিটের মধ্যে ম্যাচ শেষ করে দিতে।”
ম্যাচ জুড়ে মোহামেডানের পোস্টে প্রতিরোধের দেয়াল হয়ে ছিলেন সুজন। দামাশেনোর দুর্দান্ত শটে পরাস্ত হওয়ার পর ১০৪তম মিনিটে কর্নার থেকে তালগোল পাকিয়ে গোল হজম করেন তিনি। এই গোল নিয়েই ছড়ায় উত্তেজনা। মোহামেডানের খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে ডাগআউটে অবস্থান নেন ফাউলের দাবি করে।
রিপ্লেতে দেখা যায়, সুজন লাফিয়ে ওঠার সময় বোবুরবেক ইয়ুলদাশভ ও সুলেমানে দিয়াবাতেও কিছুটা লাফিয়ে উঠেছিলেন, সেসময় কিংস ডিফেন্ডারের হালকা পুশ ছিল দিয়াবাতের পিঠে, সুজনের সঙ্গে তার সরাসরি কোনো সংস্পর্শ অবশ্য ছিল না।
৩৯তম মিনিটে আক্রমণে ওঠা সানডেকে বাজেভাবে ফাউল করেন আগেই একটি হলুদ কার্ড দেখা বিশ্বনাথ ঘোষ। এ দফায় রেফারি জসীম আখতার কার্ড না দেখালে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মোহামেডানের ডাগআউট। ম্যাচ শেষে আলফাজ ক্ষোভ উগরে দেন রেফারিং নিয়ে।
“প্রথম হলুদ কার্ড পাওয়ার পরে তিনটা ফাউল করছে (বিশ্বনাথ), তাও কার্ড দেয়নি। তাহলে আপনি কিভাবে খেলবেন? এত সাপোর্ট করলে কি খেলা যায়?”
গোলরক্ষক সুজনের দাবি বল তার গ্লাভস গলে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ বোবুরবেকের ধাক্কা।
“রেফারি শুরুতে ফাউলের বাঁশি বাজাতে গেছে, যেই দেখছে গোল, তখন দুই সেকেন্ড পর গোলের বাঁশি বাজিয়ে দিয়েছে। তাদেরই জিজ্ঞেস করেন (নিয়ম)….গোলকিপারের গায়ে হালকা টাচ লাগলেই ফাউল, আমার নাকি কারো টাচই লাগে নাই। টাচ না লাগলে আমি পড়ে গেলাম কিভাবে?