রংপুর-২: লাঙ্গলের লড়াই রাজত্বে ফেরার, নৌকার ধরে রাখার

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় থেকেই রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) সংসদীয় আসনটি জাতীয় পার্টির অনেকটা ‘নিজস্ব’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

মাসুম বিল্লাহও আফতাবুজ্জামান হীরু রংপুর থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2018, 07:33 AM
Updated : 24 Dec 2018, 07:37 AM

পঞ্চম ও সপ্তম সংসদে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এরশাদ। এরপরের দুই নির্বাচনেও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা জেতেন এখানে।

কিন্তু ২০১৪ সালে দশম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডিউক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হলে জাতীয় পার্টির দীর্ঘদিনের রাজত্ব হাতছাড়া হয়। ডিউক এবারও প্রার্থী।

ফলে একাদশ নির্বাচনে রংপুর-২ আসনটিতে রাজত্ব ফিরে পাওয়ার আর ধরে রাখার জমাট লড়াই দেখার অপেক্ষায় ভোটাররা।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিছু আসনে সমঝোতায় আসলেও দেড়শ আসনের মত এখানেও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে প্রার্থী রেখেছে জাতীয় পার্টি। এই আসনে লাঙ্গলের কাণ্ডারী হয়েছে আসাদুজ্জামান চৌধুরী।

তবে নিজেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালিয়ে আসা হাড়িয়াকুঠি ইউনিয়নে তিনবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান জাসদের কুমারেশ চন্দ্র রায়ও (মশাল প্রতীক)  লাঙ্গল ও নৌকার ভোটে ভাগ বসাবেন বলে ধারণা করছেন ভোটাররা। 

ভোটাররা বলছেন, রংপুর-২ মূলত লাঙ্গলের আসন হলেও পাঁচ বছরে ডিউক চৌধুরীর একটা প্রভাব তৈরি হয়েছে এলাকায়। তাছাড়া এখানকার সোয়া তিন লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬৫ হাজার সংখ্যালঘু হওয়ায় এটা আওয়ামী লীগের বড় ভোট ব্যাংক।

তারাগঞ্জের ভোটার আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের ভোটে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার কথা নৌকার সঙ্গে লাঙ্গলের। কিন্তু মশাল প্রতীকে জাসদের প্রার্থী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হওয়ায় তিনি কিছু ভোট টানতে পারবেন।”

বদরগঞ্জ থেকে তারাগঞ্জে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী পথসভায় যোগ দিতে আসা হরিপ্রসাদ দাস বলেন, “আমরা সংখ্যালঘু আর আদিবাসীরা নৌকার সঙ্গে আছি। এবারও তাই।”

শক্ত তিন প্রার্থীর মধ্যে অনেকটাই কোনঠাসা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার, যিনি নিজেও এক সময় জাতীয় পার্টিতে ছিলেন। ভোটারদের ধারণা, খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না মোহাম্মদ আলী।

২০০১ সালে জাতীয় পার্টির টিকেটে সাংসদ হওয়া মোহাম্মদ আলী ২০০৮ সালে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোট করেছিলেন; পরে বিএনপিতে ভেড়েন। ২০০১ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ আলীর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডিউক চৌধুরীর চাচা আনিসুল হক চৌধুরী।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতকে এই আসন ছেড়ে দিলেও জিতে আসতে পারেননি যুদ্ধাপরাধের মামলায় কারাগারে থাকা দলটির নেতা নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম। ওই নির্বাচনে তাকে হারিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির আনিছুল ইসলাম মণ্ডল। এবার দলের মনোনয়ন না পেয়ে মণ্ডল সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

ভোটার আব্দুল হক বলেন, এবারের নির্বাচনে ধানের শীষের ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আগে লাঙ্গল প্রতীকেই সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু এবার তাদের সঙ্গে লাঙ্গলের প্রার্থী থাকায় তারা সেভাবে ভোট টানতে পারবেন না।

তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ ঘুরে নৌকার পোস্টারে পোস্টারের ভিড়ে লাঙ্গলের কিছু পোস্টার দেখা গেলেও ধানের শীষ তেমন চোখে পড়েনি।

এর কারণ হিসাবে পুলিশি হয়রানিকে উল্লেখ করেন বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শাহান।

“পুলিশ বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী-সমর্থকদের তালিকা করে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। আমরা নির্বাচন করতেছি ঠিক, কিন্তু রাতে কেউ বাড়িতে ঘুমাতে পারি না।”

সংখ্যালঘুদের ভোট ধানের শীষ না পেলেও নৌকা আর মশালে ভাগাভাগি হয়ে যাবে বলে মনে করেন এই বিএনপি নেতা।

“আমাদের প্রার্থীও (মোহাম্মদ আলী) অনেক জনপ্রিয়। আওয়ামী লীগের আনিসুল হক চৌধুরীর প্রতিপত্তির মধ্যেও তিনি সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। আবার তিনবার উপজেলা চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। আমরা তাকে নিয়ে জয়ের আশা করছি।”

এই আসনে অন্য প্রার্থীরা হলেন- কুলা প্রতীকে বিকল্পধারার হারুন অর রশিদ, হাতপাখায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আশরাফ আলী, আম প্রতীকে এনপিপির ওয়াসিম আহমেদ, গোলাপ ফুলে জাকের পার্টির আশরাফ উজ জামান এবং টেলিভিশনে বিএনএফের জিল্লুর রহমান।