মানব বিবর্তনের গবেষণায় চিকিৎসায় নোবেল

সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবারের বিজয়ী হিসেবে স্ভান্তে প্যাবোর নাম ঘোষণা করেছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2022, 09:59 AM
Updated : 3 Oct 2022, 09:59 AM

জিন গবেষণার মাধ্যমে মানব বিবর্তনের অজানা অধ্যায়ে আলো ফেলা সুইডিশ বিজ্ঞানী স্ভান্তে প্যাবো পেলেন চিকিৎসায় এবারের নোবেল পুরস্কার।

সোমবার সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবারের বিজয়ী হিসেবে স্ভান্তে প্যাবোর নাম ঘোষণা করে বলেছে, ৪০ হাজার বছর আগে বিলুপ্ত মানুষের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নিয়ানডার্থালদের জিন বিন্যাস উন্মোচন এবং বিশ্লেষণের প্রায় অসম্ভব কাজটি তিনি সম্ভব করেছেন।

তিনি কেবল নিয়ানডার্থালদের তত্ত্ব-তালাশ নেননি, তাদেরও আগে বিলুপ্ত ডেনিসোভান নামের আরেকটি প্রজাতির সন্ধান তিনি দিয়েছেন, যাদের কথা মানুষের অজানা ছিল।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে অভিবাসনের সময় ওই দুটি প্রজাতির জিন যে আজকের মানুষ, অর্থাৎ হোমে সেপিয়েন্সের মধ্যেও এসেছিল, বিজ্ঞানী প্যাবোই তা প্রথম উদঘাটন করেন।

নোবেল কমিটি বলছে, মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাস জানতে এবং কীভাবে মানুষ পুরো পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছিল, তা বুঝতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে স্ভান্তে প্যাবোর গবেষণা।

আজকের মানুষ, অর্থাৎ হোমে সেপিয়েন্স কোথা থেকে এল এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা যখন একের পর এক বিলুপ্ত হয়ে গেল, তখন মানুষ কীভাবে টিকে থেকে আজকের অবস্থায় পৌঁছাল- এ মৌলিক দুটি প্রশ্নের উত্তর অন্বেষণে আজকের মানুষকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন সুইডিশ এই বিজ্ঞানী।  

বিবিসি লিখেছে, মানুষের জিনবিন্যাস নিয়ে গবেষণা গতি পেয়েছিল ১৯৯০ এর দশকে। তবে সেসব গবেষণা মূলত ছিল সমকালীন নমুনা নিয়ে। অন্যদিকে স্ভান্তে প্যাবোর আগ্রহ ছিল প্রাচীন এবং বিলুপ্ত পূর্বপুরুষদের জিন নিয়ে। তিনিই প্রথম ৪০ হাজার বছর আগের এক হাড় থেকে নিয়ানডার্থালদের জিনবিন্যাস উন্মোচন করেন।

তার সেই গবেষণায় দেখা যায়, নিয়ানডার্থালদের জিনবিন্যাস আজকের মানুষ আর শিম্পাঞ্জির থেকে আলাদা।

নোবেল কমিটি বলছে, মানুষ কীভবে আজকের মানুষ হয়ে উঠল, সেই না জানা অধ্যায়ের ওপর প্যাবো আলো ফেলেছেন জিনবিন্যাসের ওই পার্থক্য উন্মোচনের মধ্য দিয়ে।

নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য বাবদ স্ভান্তে প্যাবো পাবেন এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার। নোবেল জয়ের এই সুখবরটি ফোন করে প্রথম তাকে দেন নোবেল কমিটির সেক্রেটারি টমাস পার্লমান।

পরে পুরস্কারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে এসে পার্লমান বলেন, সুখবর শুনে রীতিমত অভিভূত হয়ে পড়েন এই বিজ্ঞানী।

“তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, খবরটা অন্য কারো সঙ্গে বা তার স্ত্রীকে জানাতে পারবেন কি না। আমি বললাম ঠিক আছে, জানাতে পারেন। তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন।”

৬৭ বছর বয়সী স্ভান্তে প্যাবোর জন্ম সুইডেনের স্টকহোমে। তার বাবা বায়োকেমিস্ট সুনে বার্গস্টর্মও ১৯৮২ সালে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভোলুশনারি অ্যানথ্রোপলজি এবং জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে মানব বিবর্তনের ওপর গবেষণা করেছেন  প্যাবো।

গত বছর যৌথভাবে এ পুরস্কার পান যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ডেভিড জুলিয়াস ও অডার্ম প্যাটাপুটেন। সূর্যের ঊষ্ণতা কিংবা প্রিয়জনের স্পর্শ মানবদেহ কীভাবে অনুভব করে তা নির্ণয়ের একটি রিসেপ্টর তৈরি করেছিলেন তারা।

চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কারের মধ্য দিয়েই প্রতিবছর এবারের পর্ব শুরু হল। এছাড়া মঙ্গলবার পদার্থবিদ্যা, বুধবার রসায়ন, বৃহস্পতিবার সাহিত্য ও শুক্রবার শান্তিতে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।

সবশেষ ১০ অক্টোবর অর্থনীতি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি।