‘বইয়ে পড়েছি এতদিন, আজ সরাসরি দেখলাম’

সূর্যগ্রহণে আসলে কী ঘটে, সূর্য কীভাবে চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়ে তা টেলিস্কোপে দেখে রীতিমত শিহরিত ঢাকার কল্যাণপুরের জামিলা আইনুল আনন্দ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী তৃণা মজুমদার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2019, 03:12 PM
Updated : 26 Dec 2019, 03:31 PM

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে সূর্যগ্রহণ পরিদর্শনের অস্থায়ী ক্যাম্পে টেলিস্কোপ থেকে চোখ সরিয়ে সে বললো, “বইয়ে পড়েছি এতদিন, আজ সরাসরি দেখলাম।”

তৃণার মত পাঁচ শতাধিক নানা বয়সী মানুষ‍ বৃহস্পতিবার এই ক্যাম্পে এসে বছরের শেষ সূর্যগ্রহণ দেখতে চোখ রেখেছিল আকাশে।

কক্ষপথ পরিক্রমায় চাঁদ যখন পৃথিবী আর সূর্যের মাঝে এক সরলরেখায় চলে আসে, তখন পৃথিবীর মানুষের চোখে কিছু সময়ের জন্য ঢাকা পড়ে যায় সূর্য। পৃথিবীর মানুষ সেটাকেই সূর্যগ্রহণ বলে।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সহকারী কিউরেটর মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চাঁদ যখন সূর্যকে আংশিক ঢেকে দেয়, তখন তাকে বলে আংশিক সূর্যগ্রহণ। আর চাঁদের কৌণিক ব্যস সূর্যের চেয়ে ছোট হলে ঘটে বলয়গ্রাস গ্রহণ।

টেলিস্কোপ দিয়ে সূর্যগ্রহণ দেখতে বৃহস্পতিবার জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে ভিড় করে নানা বয়সী কয়েকশ মানুষ।

বলয়গ্রাসে পুরো সূর্য চাঁদের আড়ালে ঢাকা পড়ে না,চূড়ান্ত মুহূর্তে পৃথিবীর মানুষের চোখে অন্ধকার চাঁদের চারদিকে সূর্যের বাইরের অংশটি উজ্জ্বল বলয়ের আকারে দৃশ্যমান হয়। তাই একে বলা হয় ‘রিং অব ফায়ার’।

বৃহস্পতিবার এশিয়ার কয়েকটি দেশে সেই রিং অব ফায়ার পুরোপুরি দেখা গেলেও বাংলাদেশ থেকে দেখা গেছে আংশিক গ্রহণ।

মাসুদুর রহমান জানান, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২ মিনিটে গ্রহণ শুরু হয়। সর্বোচ্চ গ্রহণ লাগে সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে, শেষ হয় বেলা ১২টা ৬ মিনিটে।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের কিউরেটর সুকল্যাণ বাছাড় বলেন, “সাধারণত ১৮ বছর পরপর গ্রহণ পুনরাবর্তিত হয়। বিজ্ঞানীরা সারোস চক্র দিয়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ চিহ্নিত করেন। প্রতিটি সারোসচক্র প্রায় ৭৫টি গ্রহণে সমাপ্ত হয়। এবারের গ্রহণের সময় প্রচ্ছায়া অঞ্চলে ছিল দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার কিছু অঞ্চল। বাংলাদেশ ছিল উপচ্ছায়া অঞ্চলে।

“তাই বলয়গ্রাস বা রিং অব ফায়ার যা বলি, তা দেখা গেছে ওই ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার কিছু অঞ্চলেই। এবারের প্রচ্ছায়া অঞ্চল ৮৩ কিমি চওড়া। আমরা সেই অঞ্চল থেকে ৬০ শতাংশ দূরে আছি। তাই আমরা বলয়গ্রাসের ৪০ শতাংশ দেখতে পেয়েছি।”

বাংলাদেশ থেকে সবশেষ ২০১০ সালে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। পরবর্তী বলয়গ্রাস সূরযগ্রহণ দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৪৫ বছর। ২০৬৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেখা যাবে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ। এরপর ২১১৮ সালে ২২ মার্চ আবারও দেখা যাবে বলয়গ্রাস গ্রহণ।

ঢাকার আগারগাঁও বিজ্ঞান জাদুঘরে সূর্যগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

পৃথিবী থেকে প্রতি বছর দুই থেকে পাঁচটি সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। এর মধ্যে দুটি হয় পূর্ণগ্রাস; অর্থাৎ সূর্য কিছুক্ষণের জন্য পুরোপুরি চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়ে যায়।  বাংলাদেশে সর্বশেষ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ২০০৯ সালের ২২ জুলাই। বাংলাদেশ থেকে পরের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ২১১৪ সালের ৩ জুন।

জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের বিজ্ঞান শিক্ষা কার্যক্রমের সহকারী কিউরেটর ইমতিয়াজ মো. নাবিল জানান, ১২ ইঞ্চি দুটি অ্যাডভান্সড কোমা-ফ্রি (এসিএফ) সোলার টেলিস্কোপ দিয়ে এবার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখার আয়োজন করা হয়।

“আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ও হিলিয়াম নির্গমণের কারণে সূরে্যর চারদিকে লাল বলয় দেখা যায় এসিএফের মাধ্যমে। পাশাপাশি আমরা ছোট ছোট মালয়েশিয়ান সোলার ফিল্টারও দিয়েছি। এই ফিল্টার দিয়ে ৫ সেকেন্ড দেখার পর নামিয়ে ফেলতে হয়। খালি চোখে গ্রহণ দেখা বিপজ্জনক।”

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ক্যাম্পের উদ্বোধন করার পর শিশু-কিশোরদের নিয়ে অভিভাবকরা গ্রহণ দেখতে শুরু করেন টেলিস্কোপে।

কিশোরগঞ্জের কলেজ শিক্ষক সুজন কুমার সূত্রধর সূর্যগ্রহণ এসেছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বিরল এই সূর্যগ্রহণ দেখার সুযোগ মিস করতে চাইনি। টেলিস্কোপের ভেতর দিয়ে দেখলাম সূরে্যর চারদিকে লাল বৃত্তের মত এক আগুনের বলয়, অসাধারণ!”

আরও খবর -