রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস এ পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার এবং ব্রিটিশ গবেষক ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পারের নাম ঘোষণা করেছে।
Published : 09 Oct 2024, 04:09 PM
প্রাণের অপরিহার্য জৈব অণু প্রোটিনের জটিল গঠন রহস্য উন্মোচিত হয়েছে যাদের গবেষণায়, সেই তিন বিজ্ঞানী পাচ্ছেন চলতি বছরের রসায়নের নোবেল।
রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস মঙ্গলবার এ পুরস্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ডেভিড বেকার এবং ব্রিটিশ গবেষক ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পারের নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পুরস্কারের এক কোটি ১০ লাখ সুইডিশ ক্রোনারের অর্ধেক পাবেন বেকার। আর বাকি অর্ধেক হাসাবিস ও জাম্পার সমানভাবে ভাগ করে নেবেন।
নোবেল কমিটি বলছে, ডেভিড বেকার সম্পূর্ণ নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরির প্রায় অসম্ভব কীর্তির ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। আর ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পার ৫০ বছরের পুরনো সমস্যা সমাধানে একটি এআই মডেল তৈরি করেছেন, যেটি মূলত প্রোটিনের জটিল গঠন কাঠামোর ব্যাপারে ধারণা দেয়। তাদের এই কর্ম বিশাল সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে।
ডেভিড বেকার প্রথমবারের মত একটি প্রোটিন তৈরি করেছেন, যার নাম ‘টপ৭’। এটি বিদ্যমান সব প্রোটিন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রোটিনের গঠন নিয়ে কাজ করা গবেষকদের জন্য এই প্রোটিনের উদ্ভাবন ‘অপ্রত্যাশিত’ ঘটনা। এর আগে যারা নতুন প্রোটিন তৈরি করেছেন, তারা কেবল জগতে বিদ্যমান প্রোটিনের গঠনের অনুরূপ প্রোটিন তৈরি করতে পেরেছেন।
নোবেল কমিটি বলছে, ‘টপ৭’ প্রোটিনের মত এমন অনন্য গঠনের অস্তিত্ব জগতে নেই। ৯৩টি অ্যামাইনো অ্যাসিডসহ আগের নতুন গঠনরীতিতে তৈরি যে কোনো প্রোটিনের চেয়ে এটি বড়।
রয়টার্স লিখেছে, হাসাবিস ও জাম্পার পরিচিত প্রায় সব রকমের প্রোটিনের গঠনের ধারণা দিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করেছেন। আর ডেভিড বেকার জীবনের ‘বিল্ডিং ব্লক’ কোষের বিষয়ে জ্ঞানের দুয়ার খুলেছেন এবং সম্পূর্ণ নতুন প্রোটিন তৈরি করেছেন।
ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড বেকার যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৮৯ সালে পিএইচডি করেন।
২০২৪ সালে স্বাস্থ্যে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী যে তালিকা করেছে টাইম ম্যাগাজিন, সেখানেও উঠে এসেছে বেকারের নাম। তিনি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ‘প্রোটিন ডিজাইন ইনস্টিটিউটের’ পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্রিটিশ গবেষক ডেমিস হাসাবিস ১৯৭৬ সালে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে ২০০৯ সালে তিনি পিএইচডি করেন। গুগলের এআই ইউনিট ‘গুগল ডিপমাইন্ড’ এর সিইও হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন।
অপরদিকে জন জাম্পার যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৫ সালে। শিকাগো ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ২০১৭ সালে পিএইচডি করেন। তিনি ‘গুগল ডিপমাইন্ড’ এর সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট।
এবার রসায়নে নোবেলের জন্য ডেভিড বেকারের নাম চূড়ান্ত করে তাকে ফোন করে নোবেল কমিটি। সেই ফোনকলের অনুভূতি কেমন তার কাছে জানতে চায় রয়টার্স।
জবাবে বেকার বলেন, “আমি যখন ঘুমাচ্ছিলাম, তখন ফোনটি আসে। ফোন ধরার পর আমি নোবেল কমিটির ঘোষণা শুনতে পাই। এরপর আমার স্ত্রী আনন্দে চিৎকার করছিল। সত্যি কথা, ওই কারণে আমি ভালোভাবে শুনতেও পাইনি।
“সেসময় ফোনের অপর পাশের অসাধারণ সেই লোকটি আমাকে অন্য কোথাও যেতে বলে, যাতে স্পষ্ট শুনতে পাই।…এটি খুবই রোমাঞ্চকর অনুভূতি। আমি মনে করি এটি বিশেষ একটি দিন।”
ডেমিস হাসাবিস নোবেল পাওয়ার খবরে বলেন, “এটি অবিশ্বাস্য এক মুহূর্ত। সত্যিই বিশ্বাস করার মত না। এটি সত্যিই বিশাল একটি খবর।”
অপরদিকে জন জাম্পার তার নোবেল পাওয়ার খবর একটি ভিডিওতে শেয়ার করেছেন।
আর গুগলের দুই গবেষক রসায়নে এবার নোবেল পাওয়ায় ‘গুগল ডিপমাইন্ড’ এক্সে লিখেছে, “এটি এআইয়ের জন্য বিশাল অর্জন।”
এক দিন আগেই পদার্থে নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় সাবেক সহকর্মী জেওফ্রে হিন্টনকে অভিনন্দন জানান ডেমিস হাসাবিস। পরদিন রসায়নে নোবেল পাওয়ায় হাসাবিসও অভিনন্দিত হচ্ছেন।
কানাডার গবেষক জেওফ্রে হিন্টন এবার পদার্থে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী জন জে হপফিল্ডের সঙ্গে নোবেল পেয়েছেন। ব্রিটিশ-কানাডিয়ান অধ্যাপক হিন্টনকে কিছু ক্ষেত্রে ‘এআইয়ের গডফাদার’ বলা হয়। ২০২৩ সালে তিনি গুগল থেকে ইস্তফা দেন।
ন্যানো টেকনোলজির গবেষণায় কোয়ান্টাম ডটস নামের অতি ক্ষুদ্র ন্যানো পার্টিকেল উদ্ভাবন ও উন্নয়নের স্বীকৃতিতে গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের মুঙ্গিয়া জি বাবেন্দি, লুইস ব্রুস এবং অ্যালেক্সি একিমভ রসায়নে নোবেল পান।
বরাবরের মতই চিকিৎসা বিভাগের পুরস্কার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সোমবার চলতি বছরের নোবেল মৌসুম শুরু হয়। মঙ্গলবার ঘোষণা হয় পদার্থবিদ্যার নোবেল।
বৃহস্পতিবার আসবে সাহিত্যের নোবেল ঘোষণা। এরপর শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১৪ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
১০ ডিসেম্বর আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।