এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।
Published : 17 Mar 2023, 09:06 PM
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় চুরির অভিযোগে এক যুবককে গাছের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের মার্কেট সংলগ্ন খান বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, “আজ দুপুরে বিষয়টি আমরা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ঘটনা জেনে পরবর্তী সময়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নির্যাতনের শিকার আরিফুল খান (২৮) দমদমা গ্রামের উসমান খানের ছেলে। তাকে স্বজনরা গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পর ওইদিন রাত ১০টার পর বাড়ি নিয়ে আসে।
আরিফুল খানের ভাই আশরাফুল আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার এক বাসিন্দা ৩-৪ বছর আগে দমদমা এলাকায় জমি কিনেন। জমিতে সীমানা প্রাচীরের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার তিনি জমি দেখার জন্য আসেন এবং প্রাইভেটকার রেখে ভিতরে যান। এ সময় কে বা কারা ওই গাড়ির গ্লাস ভেঙে টাকা নিয়ে যায়।
“এই আভযোগে স্থানীয় আফসার উদ্দিন বাগমারের ছেলে কাউসার বাগমার, আজিজ খানের ছেলে ফজলুল হক খান, সিরাজ উদ্দিন খান (৭০), তার ছেলে ইজ্জত আলী খান, স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল হক খানের নির্দেশে আরিফুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়।
আশরাফুল আলম খান বলেন, “পরে আরিফুলের পায়ে দড়ি বেঁধে পা উপরের দিকে তুলে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে মারধর করে। নির্যাতনের কারণে আমার ভাই জিহ্বা বের করে দিলে তারা মারধর বন্ধ করে দেয়।
এ ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েছেন আরিফুলের পরিবারের সদস্যরা।
নির্যাতনের শিকার আরিফুল খান বলেন, “আমি সকালে নাস্তা করে খেয়ে ঘরে শুয়ে আছিলাম। পরে প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার আমাকে ফোন দিয়ে যেতে বলে। আমি যাইনি। পরে সে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে দুই পা বেঁধে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে শরীরের সব জায়গায় মারধর করে। আমি ওই গাড়ির গ্লাস ভাঙিনি।”
প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন শেখ বলেন, “বৃহস্পতিবার পাশের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দেখতে গিয়েছিলাম। পরে দুপুরের দিকে আরিফকে গাছের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে মারার খবর আমাকে ফোন করে জানানো হয়। তখন স্থানীয় কয়েকজনের কাছে ফোন করলে তারা তাকে ছেড়ে দেয়। পরে বিকেলে বাড়িতে গিয়ে আরিফুল খানকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠাই।
তিনি আরও বলেন, “চুরি করে থাকলে আইনের হাতে তুলে দেবে। এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি। তবে সে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি-না এ বিষয়ে কেউ কোনো প্রমাণ দেয়নি বা যার টাকা চুরি হয়েছে তারও কোনো অভিযোগ নেই।”
প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য কাউসার মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেন, “আরিফুল চুরি করেছে। তাই তাকে মারধর করা হয়েছে। তাছাড়া একটা চোরের বিষয়ে আপনি কেন আমাকে ফোন দিয়েছেন? সে চোর এবং চুরি করেছে। তার বিরুদ্ধে আগেও চুরির অভিযোগ রয়েছে।”
ওই জমি দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) মিশু বলেন, “টাকা চুরির পর মালিক কাউকে বিচার দেননি। কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি ওই যুবককে মারধর করেছে। আমাদের সাহেব মুরুব্বি মানুষ। এমন ঘটনার সঙ্গে থাকার প্রশ্নই আসে না।“
প্রহ্লাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, “ওই যুবককে মারধরের একটি ভিডিও দেখেছি। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।”