দেবিদ্বার পৌরসভার ভিংলাবাড়ি এলাকায় সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
Published : 04 Oct 2022, 11:02 PM
দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে ফের দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন কুমিল্লা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও দেবিদ্বার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ।
সোমবার রাতে দেবিদ্বার পৌরসভার ভিংলাবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ও আবুল কালাম আজাদ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছেন।
কুমিল্লার এ দুই নেতার মধ্যে রাজনৈতিক ও আধিপত্য বিস্তারের বিরোধ পুরনো। আড়াই মাস আগে একবার জাতীয় সংসদে তাদের হাতাহাতির ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এবার পূজা নিয়ে দ্বন্দ্ব ফের প্রকাশ্যে এল।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনের সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য; আর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে আজাদ নেতা-কর্মীদের নিয়ে পৌরসভার আলিয়াবাদে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান। একই সময়ে সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলও তার অনুসারীদের নিয়ে একই এলাকায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন।
এক পর্যায়ে বহরের গাড়ি রাখা নিয়ে উভয়ের নেতা-কর্মীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আবুল কালাম আজাদ তার গাড়িবহর নিয়ে পৌরসভার ফতেহাবাদে একটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ভিংলাবাড়ি এসে স্থানীয় এক নেতার বাড়িতে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় ওই পথ দিয়ে রাজী ফখরুলের গাড়িবহর আলিয়াবাদের মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ফতেহাবাদে আরেকটি মণ্ডপে যাচ্ছিলন। এ সময় দুপক্ষের নেতকর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেন।
আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছি। আমি নেতা-কর্মীদের নিয়ে ফতেহাবাদ এলাকায় একটি পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ভিংলাবাড়ি পৌঁছালে তারা হামলা চালায়। আমি থামাতে গেলে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক রাউন্ড গুলি করা হয়। সন্ত্রাসীরা আমার ব্যবহৃত গাড়িটি ভাঙচুর করেছে। আমার সরকারি গাড়িতেও গুলি করেছে, সৌভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই।”
এ সময় তার অনুসারী ৫/৬ জন নেতা-কর্মীকে পিঠিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে, যাদের মধ্যে ‘গুরুতর আহত’ সজিব নামে একজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
আহতদের মধ্যে ভিংলাবাড়ির মো. জহির, মাহবুব হোসেন, সজিব মিয়া, বানিয়াপাড়ার হিমেল ও শুভও রয়েছেন বলে তার ভাষ্য।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মঙ্গলবার একাধিকবার ফোন করলেও সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল ফোন ধরেননি।
তবে এর আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমি লক্ষ্য করছি সোমবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও কয়েকটি মিডিয়ায় মিথ্যাচার করছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।”
তিনি বলেন, আমরা আলিয়াবাদের মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে ফতেহাবাদ আরেকটি মণ্ডপে যাচ্ছিলাম। ওই পথে অপেক্ষা করছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার লোকজন। যখনই আমার গাড়ি ওই সড়ক অতিক্রম করছিল তখন আজাদের লোকজন আমার গাড়িবহর লক্ষ্য করে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে এবং চারদিক থেকে লাঠিসোঠা ও ইটপাটকেল নিয়ে হামলা করে। যদিও গুলিবর্ষণের আগেই আমার গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থল অতিক্রম করায় কোনো ক্ষতি হয়নি।”
তবে গাড়ি বহরে থাকা মোটরসাইকেল আরোহী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তিনি জানান।
এমপি রাজী আরও বলেন, “আমার নেতাকর্মীরা সংঘর্ষ এড়াতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে শুনেছি স্থানীয় লোকজন চেয়ারম্যানের কর্মীদেরকে ধাওয়া করেছে। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে শুনেছি চারদিক থেকে তাদের নেতাকর্মীর ছোড়া ইটপাটকেলে তাদের কয়েকটা গাড়ির গ্লাস ভেঙেছে।”
দেবিদ্বার থানার ওসি কমল কৃষ্ণ ধর বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে সাথে সাথে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে।”
এর আগে চলতি বছরের ১৬ জুলাই জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে বৈঠকে আবুল কালাম আজাদকে কিল-ঘুষি মারেন সংসদ সদস্য রাজী। সেদিন আজাদও চড়াও হয়েছিলেন রাজীর উপর। এরপর থেকে দুই নেতার রাজনৈতিক বিরোধ ও দ্বন্দ্বের বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটমাট হয়েছিল।