ঠাকুরগাঁওয়ে নলকূপে উঠছে না পানি, সংকটে হাজারো পরিবার

সংকট মেটাতে অনেকেই কুয়ার পানি ব্যবহার শুরু করলেও কিছুদিন না যেতেই সেখানেও একই অবস্থা।

মোঃ শাকিল আহমেদঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2023, 02:50 PM
Updated : 11 May 2023, 02:50 PM

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের নলকূপে মিলছে না সুপেয় পানি।

প্রয়োজন মেটাতে অনেকেই কুয়ার পানি ব্যবহার শুরু করলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই সেখানেও একই অবস্থা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে গ্রামগুলোর কয়েক হাজার পরিবার।

সরেজমিনে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর, সালন্দর, শুখানপুকুরী ও আক্চা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে পানি সংকটের বিষয়টি নজরে পড়ে। এসব ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রামে এ সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে।

ঠাকুরগাঁও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানিয়েছে, এসব এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। বেশ কয়েক বছর আগেও ৬০ বা ৯০ ফুট গভীরে পানির স্তর মিললেও এখন ১৫০ ফুট গভীরেও মিলছে না। এতে করে অচল হয়ে পড়েছে নলকূপগুলো। কিছু নলকূপে পানি মিললেও তা পর্যাপ্ত নয়।

গ্রামবাসী জানায়, সংকট মোকাবেলায় গ্রামের মানুষ মাটি খুঁড়ে স্লাব বসিয়ে কুয়া তৈরি করেছেন। কিন্তু এসব কুয়াতেও পর্যাপ্ত পানি মিলছে না। তিন থেকে চার মাস ধরে এ সংকট চলছে।

আক্চা ইউনিয়নের নিমবাড়ী গ্রামের ৬৮ বছর বয়সী বাবুল চন্দ্র বলেন, “পানির অপর নাম জীবন, কিন্তু এই পানিই এখন আমাদের কাছে সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।

“এক জগ পানির জন্য এর বাড়ি, ওর বাড়ি ছুটতে হচ্ছে; তারপরও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এ ভোগান্তির কথা বলে বুঝানোর মতো না। খুব কষ্ট করে আমাদের দিন যাচ্ছে।”

একই গ্রামের ববিতা রাণী বলেন, “হঠাৎ করেই গ্রামের টিউবওয়েলগুলোতে জলের সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েলে এক ঘণ্টা চাপলেও পরিবারের জন্য একবেলার জন্য জল নিতে পারি না। এ সঙ্কটের কারণে নিত্যদিনের কাজগুলোও করতে পারছি না।”

জগন্নাথপুর ইউনিয়নের খোচাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, “টিউবওয়েলে পানি উঠছে না দেখে মাটি খুঁড়ে স্লাব বসিয়ে কুয়া তৈরি করা হয়েছে, কিন্তু সেই কুয়াতেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

“যারা বড়লোক তারা সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি তুলছেন; আর কষ্টে আছেন আমাদের মত গরীবরা।”

পানি সংকট নিরসনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে গ্রামবাসী।

টিউবওয়েল মিস্ত্রি প্রবীণ চন্দ্র বর্মন বলেন, বেশ কয়েক বছর আগেও ৬০ বা ৯০ ফুট গভীরেই পানির স্তর পাওয়া যেত। কিন্তু এখন ১৫০ ফিট গভীরে পাইপ স্থাপন করলেও পানির দেখা মিলছে না।

এর কারণ হিসেবে তিনি অনাবৃষ্টি ও খাল-বিলগুলো ভরাট করাকে দায়ী করেছেন।

আক্চা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মন বলেন, ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে পানির সংকটদেখা দিয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করে দেওয়া হচ্ছে। সেগুলোতেও পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

পানির এই সংকট দূর করতে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

ঠাকুরগাঁও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়হান আলী জানিয়েছেন, অনাবৃষ্টি ও খরার কারণে পুকুর-ঘাট, খাল-বিল ও নদ-নদী শুকিয়ে গেছে। এছাড়া পুকুর ভরাট ও নদী ছোট হয়ে আসায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে চলে যাওয়ায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষ করে ওইসব এলাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে দাবি সায়হান আলীর।

পানির স্তরসহ সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান।