চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ: নেই মামলা, অধরা অস্ত্রধারীরা

কোনো পক্ষই এসব অস্ত্রবাজদের নিজেদের লোক বলে স্বীকার করছে না।

কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2023, 03:46 PM
Updated : 10 June 2023, 03:46 PM

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার চারদিনেও কোনো পক্ষে মামলা করেনি। সংঘর্ষের সময়ের ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাওয়া অস্ত্রধারীরাও অধরা আছেন।

মামলা বা অভিযোগ না পেলেও অস্ত্রধারীদের পরিচয় শনাক্তে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকি এবং বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলা সদরের চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের নেতাকর্মীরা। 

ওই কর্মসূচিকে বানচাল করতে তাদের প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা পাল্টা কর্মসূচির ঘোষণা দেয় এবং তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে যানবাহনে তল্লশি করেন বলেন সংঘর্ষে আহত এক বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। এদের মধ্যে কয়েকজনকে সরাসরি গুলি ছোড়াসহ অস্ত্রের মহড়া দিতেও দেখা যায়। তবে অস্ত্রধারীদের বেশিরভাগই ছিলেন হেলমেট পরা। এরই মধ্যে অস্ত্রধারীদের ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। 

সংঘর্ষের সময় ককটেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল, ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি।

ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে চৌদ্দগ্রাম বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর চালালো হয়। সংঘর্ষের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিন ঘণ্টা ধরে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

এ ঘটনায় বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

যদিও ঘটনার পর থেকেই আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চৌদ্দগ্রাম বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই পুলিশ টহল দিচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সংঘর্ষে জড়ানো একটি পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ স্থানীয় অন্তত ১০ আওয়ামী লীগ নেতা।

অপর পক্ষে আছেন এমপি মুজিবুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিএম মীর হোসেন মীরু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বাবুল।

এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অস্ত্রধারীদের ছবি বিভিন্নভাবে পোস্ট করে এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। কোনো পক্ষই এসব অস্ত্রবাজদের নিজেদের লোক বলে স্বীকার করছে না।

মিজানুর রহমান বলেন, “এক সপ্তাহ আগে ঘোষণা করা কর্মসূচি বানচাল করতে চেয়েছিল একটি পক্ষ। কিন্তু আমাদের ধাওয়ায় তারা সেদিন পালিয়ে গেছে। ঘটনার দিন আমাদের নেতাকর্মীদের হাতে ছিল দলীয় পাতাকাসহ বাঁশের কঞ্চি। আর কারা আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি দেখিয়েছে- সেটা চৌদ্দগ্রামের মানুষ জানে। তারা প্রকাশ্যে একের পর গুলি চালিয়ে চৌদ্দগ্রামের মানুষকে আতংকের মধ্যে রেখেছে।”  

তিনি আরও বলেন, “আইনশৃংখলা বাহিনী চাইলে ছবি ও ভিডিও দেখে তাদের গ্রেপ্তার করতে পারে। আর আমাদের কোনো নেতাকর্মীর হাতে যদি আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি থাকে। তাহলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হোক।”

জানতে চাইলে এমপি মুজিবুল হকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জিএম মীর হোসেন মীরু বলেন, “সেদিন আওয়ামী লীগের বিপদগামী কিছু লোকজন বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে শান্ত চৌদ্দগ্রামকে অশান্ত করতে চেয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মী এবং চৌদ্দগ্রামের মানুষ তাদের ধাওয়া দিয়ে চৌদ্দগ্রাম থেকে বিতাড়িত করেছে। আমাদের কোনো নেতাকর্মী অস্ত্রের মহড়া দেননি। কারও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। আমাদের নেতাকর্মীরা শুধুমাত্র লাঠি হাতে নিয়ে তাদের প্রতিহত করেছে। অস্ত্রবাজি হয়ে থাকলে তারাই করেছে।”

মুজিবুলের আরেক অনুসারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রহমত উল্লাহ বাবুল বলেন, “মিজানরা জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছে। সেদিন তারাই অস্ত্রবাজি করেছে; সকল সন্ত্রাসী ছিল তাদের সঙ্গে।”

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, অস্ত্রধারীরা ছিল হেলমেট ও মুখোশ পরা। আর এদের বেশিরভাগই বহিরাগত ছিলেন বলে জেনেছি। এজন্য এখনও কাউকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রধারীদের পরিচয় নিশ্চিত হতে কাজ করছেন। পরিচয় পাওয়া গেলে এদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবারের ঘটনায় এখনও কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। এ ঘটনায় এখনও কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সদস্যরা ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে অস্ত্রধারীদের শনাক্ত করার কাজ করছেন।”

আরও পড়ুন:

Also Read: চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি, মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে জখম

Also Read: আওয়ামী লীগের ২ পক্ষের সংঘর্ষে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ