রংপুরে আলু ক্ষেতে ‘লেট ব্লাইট’ রোগ, দিশেহারা কৃষক

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে।

রংপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Feb 2023, 09:22 AM
Updated : 18 Feb 2023, 09:22 AM

রংপুরে আলু ক্ষেতে ‘লেট ব্লাইট’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে আলু গাছ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাঠভরা আলু বাঁচাতে বারবার বালাইনাশক স্প্রে করেও ফল না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা।

কৃষকদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ভরসা কীটনাশক দোকানদারদের ওপর। তবে স্প্রে করেও তেমন ফল মিলছে না। এতে করে আলুর ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

তবে জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচণ্ড শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। আক্রান্ত ক্ষেতে ওষুধ স্প্রেসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আক্রান্ত রোগ দমনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যেসব জাতে লেট ব্লাইট কম হয় সেসব জাত ব্যবহারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সঠিক পরিমাণে ওষুধ স্প্রে করার জন্যও বলা হচ্ছে। তাছাড়া কৃষকদের লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।”

রপুর সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চিলমন এলাকার কৃষক মহিফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লাভের আশায় বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৬০ দিন আগে ১০ বিঘা জমিতে ইস্টিক জাতের আলু আবাদ করেছি। আলু গাছও খুব ভালো হয়েছে।

“কিন্তু গত দুইদিন থেকে আলুতে পচন শুরু হয়েছে। এ কারণে আলু ক্ষেত নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। এ পর্যন্ত দুই হাজার টাকা খরচ করে ক্ষেতে দুবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছি। জানি না ভাগ্যে কী আছে।”

গংগাচড়া উপজেলার মর্নেয়া এলাকার কৃষক আবেদ আলী বলেন, “আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তিন দিন পরপর ওষুধ দিছি, কিন্তু কোনো কাজ হয় না। প্রতিদিন নতুন নতুন জমি আক্রান্ত হচ্ছে। আলু গাছের শুধু কাণ্ড পড়ে আছে; পাতা-আগা কিছুই নেই।”

সদর উপজেলার মমিনপুর এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, “আমরা পুরোপুরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। হঠাৎ করেই ক্ষেতে এই রোগের আক্রমণ হয়েছে। ওষুধ স্প্রে করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। আলু নষ্ট হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কীভাবে চলবো, ভাবলে দিশেহারা হয়ে যাই।”

তবে এই অবস্থায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ একই এলাকার কৃষক হামিদার রহমানের।

তিনি আক্ষেপ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষের কাছে টাকা ধার নিয়ে আলু আবাদ করছি, সেই আলু ক্ষেত যদি পচে যায় তাহলে কি হবে আমাদের ভবিষ্যত কি জানিনা।”

চওড়ার হাট এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, “নিজের অভিজ্ঞতায় আলু আবাদ করছি। কোনোদিন কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের এলাকায় আসে নাই। আমরা তাদের চেহারাও চিনি না। আমাদেরও আলু ক্ষেত মরে যাচ্ছে, আর ওনারা অফিসে বসে আছে। কিছু বলার কিছু নাই ভাই।“

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। ক্ষেতের রোগ নিরাময়ের জন্য চাষিদের নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এ ছাড়াও ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে লেট ব্লাইট এর আক্রমণ কিছুটা কমেছে।”