কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রায় ৫০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন এবং ৫০০ বাড়িঘর বন্যায় ডুবে গেছে।
Published : 27 Aug 2023, 12:20 AM
উত্তরের খরস্রোতা নদী তিস্তার ভাঙন ও বন্যার মুখে বিপদের মধ্যে পড়েছেন কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বাসিন্দারা।
শনিবার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া এই নদীর ভাঙনে উপজেলার বিদ্যানন্দ ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে।
অপরদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে এ দুটি ইউনিয়নের ৫০০ বাড়িঘর ডুবে গেছে।
বিকালে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া রেল ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুড়িগ্রামে সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পানি বাড়তে থাকায় রাস্তাঘাট অনেক স্থানে তলিয়ে গেছে। এতে চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া রান্নাবান্না, খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগির খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে ৭০৫ হেক্টর আমন ধান, ৮ হেক্টর বীজতলা ও ১১০ হেক্টর সবজি ক্ষেত বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানিয়েছেন।
রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মিনহাজুল বলেন, “আমার ইউনিয়নের সরিষাবাড়ী এলাকায় বাড়ি বাড়ি পানি উঠেছে। এখানে দুই শতাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে।”
কিসামত নাকেন্দা এলাকার ভুন্দুর বাজার জোলাপাড়ার মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে আবুল কাশেম (৫০) বলেন, গ্রামের ৭৫টি বাড়ির মধ্যে ৪৫টি বাড়িতে পানি উঠেছে।
আবেদ, মোহাম্মদ আলী নজরুল, রফিকুল, আব্দুল, সাহাদত, শাহালম, আবুল, মজিবর, মুসলিম, জয়নাল, কুদ্দুস, ফারুক, আউয়াল, কালাম, আতাউর, ইসাব আলী, সাহেব আলী, লিটনসহ অনেকের বাড়িঘরে পানি রয়েছে।
একই গ্রামের জয়নালের স্ত্রী মাহমুদা (৪৫) বলেন, “আমার ছোট পুকুরে ৪-৫ হাজার টাকায় প্রায় ১৮ কেজি মাছের পোনা ছেড়েছিলাম, সব মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।”
বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন পরিষদের খিতাব খাঁ এলাকার সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, “খিতাব খাঁ বড়দরগা গ্রামের নুর ইসলামের বাড়ি থেকে বুড়িরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনে ৫০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে।”
ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবন, চর খিতাব খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বুড়িরহাট বাজার।
খিতাব খাঁ গ্রামে এক সপ্তাহে ছামসুল, নায়েব আলী, জিয়াউল, রোস্তম, হানিফ, মাহবুল, আদর উদ্দিন, অফিকুল, ছামাদ আমিনুল, অতুল, নুর ইসলাম, নুরুল, নুর মোহাম্মদ, খয়ের উদ্দিন, আব্দুল করিম, রশীদ, রেজাউলের বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। এ ছাড়া এখানে দেড় শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠেছে বলে জানান ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ।
ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে এসে রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুরে তাসনিম বলেন, “আমার কাছে ২০ জন নদী ভাঙন কবলিত পরিবারের তথ্য এসেছে। তাৎক্ষণিকভাবে এখানে ৫০টি দুঃস্থ পরিবারে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন ও বন্যা কবলিতদের জন্য দেড় টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, “দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একটি বাজার যাতে ভাঙনের কবলে না পড়ে সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন ও বন্যা কবলিতদের সহযোগিতার জন্য পর্যন্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে বিষয়গুলো তদারকি করছি।”