পুলিশ জানায়, এক পক্ষ মামলা করেছে; জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, অপর পক্ষটিও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
Published : 31 Mar 2024, 05:54 PM
ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে পাল্টপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। উত্তেজনা বিরাজ করায় কলেজ ক্যাম্পাসে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর কলেজ রোড ও মীরবাড়ী এলাকায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এ ছাড়া গত দুদিনে তিন দফা হামলা, মারপিট, ভাঙচুর, লুটপাট, গুলি ও হাত বোমার বিস্ফোরণে কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, আনন্দমোহন কলেজের নাজমুল হোসেন নামে ছাত্রলীগের এক কর্মী শুক্রবার রাতে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ সজলসহ (২৯) ১৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
এজাহারে অন্য যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন- ফরহাদ হোসেন রানা (৩৫), ওমর ইসলাম (২৭), আতিকুল ইসলাম ইমন (২৫), মো. মেরাজ (২২), শোভন (২১), আকাশ (২০), তনু (২৩), ফয়সাল (২৩), সুপ্রিয় (২৩), শরিফ (২০), সাজ্জাত (২৩), সুপ্রিয় (২৪), রাহাত (২২), জিতু (২২)।
অন্য পক্ষটিও মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আনন্দমোহন ছাত্রলীগ কর্মী নাজমুল হোসেন বলেন, “ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন রানা, আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ সজলসহ বহিরাগত ৩৫/৪০ জন প্রায়ই আবাসিক হলে এসে বিভিন্ন অপকর্ম করার চেষ্টা করতো। আমিসহ আবাসিক হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের এসব অপকর্মে বাধা দিলে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।
“এ বিরোধের জেরে গত শুক্রবার বিকাল ৪টার দিকে অন্তত ৩৫/৪০ জন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আনন্দ মোহন কলেজের পল্লী কবি জসীম উদ্দিন আবাসিক হলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে আমার সহপাঠি জুয়েল হাসান, নাজমুল হাসান, নাঈমদের পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং তাদের কথা মত না চললে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমার সহপাঠী জুয়েল হাসান এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে মারপিট করা হয়। এক পর্যায়ে জুয়েল হাসানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাম চোখ লক্ষ্য করে ছুরিকাঘাত করা হয়। এতে সে রক্তাক্ত জখম হয়। পরে তার ডাক-চিৎকারে অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে গেলে হামলাকারীরা চলে যায়। জুয়েল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।”
নাজমুল হোসেনের অভিযোগ, “পরে বিকাল সোয়া ৫টার দিকে আবার তারা আনন্দমোহন কলেজের একই হলে প্রবেশ করে আমার কক্ষে এক লাখ টাকার জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
“এ সময় আমার ট্রাংকে থাকা নগদ ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা তারা নিয়ে যায়। এসবে বাধা দিতে গেলে ঢালী নামে একজনকে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়। কোপ ফেরাতে গিয়ে ঢালীর ডান চোখের উপরে লেগে গুরুতর আহত হন। এসময় মুরাদ নামে আরও একজনকে কুপিয়ে ডান হাতের কণিষ্ঠ আঙ্গুল কেটে ফেলে। এতে অজ্ঞাত আরও একজন আহত হন।”
তবে কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ সজলের অভিযোগ, “কলেজের পল্লী কবি জসীম উদ্দিন হলের ছেলেদের মধ্যে সামান্য ঝামেলা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নাজমুলের নেতৃত্বে আমাদের বাসার দরজা, জানালা, গেইটে ব্যাপক ভাঙচুরসহ আমার একটি দোকান লোটপাট করা হয়। এসময় নাজমুল ও তার লোকজন গুলি ও হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়।”
যদিও পাল্টা হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, “শনিবার রাতে আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম না। এই হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনার সাথে আমার বা আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মামলা থেকে বাঁচতে এটা তাদের সাজানো নাটক।”
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
তবে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, “নাজমুল নামের একটা ছেলে আছে। তার লোকজন নিয়ে শেখ সজলের দোকানে ও বাড়িঘরে হামলা করেছে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।”
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিনের দাবি, “ছাত্রলীগ নেতা শেখ সজলের দোকান ও তাদের বাড়িতে হামলা করে নাজমুল ও তার লোকজন। তবে, গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি বা কেউ আহত হননি। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ”
ওসি আরও বলেন, “শুক্রবারের ঘটনায় নাজমুল বাদী হয়ে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখ সজলসহ ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।