রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গায় জেলা পরিষদের মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় এ সমাবেশের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড ও বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক মহানগর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান।
আরও বক্তব্য দেন- মহানগর ইউনিট কমান্ডের কার্যকরী সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেসা তালুকদার, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান, সেক্টরস কমার্ন্ডাস ফোরামের বিভাগীয় সমন্বয়ক আবুল হোসেন খন্দকার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, “বিভাগীয় শহর হলেও রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নেই। এই শহীদ মিনার নির্মাণে যে জায়গাটি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সেখানেই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধারা কোনোদিন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হতে দেবে না।”
এ সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের স্থান নির্ধারণের জন্য আন্দোলনের প্রসঙ্গ টানেন এই মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি বলেন, “সেই আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। এই জায়গাটি নির্ধারণের জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল মীর ইকবাল নিজেই নেতৃত্বে ছিলেন। অথচ এখন চেয়ারম্যান হয়ে তিনি সব ভুলে গেছেন। সেই জায়গাটিতেও মার্কেট নির্মাণ করতে চান।”
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের উদ্দেশে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, “আপনার ক্ষমতা নেই শহীদ মিনারের স্থানে মার্কেট নির্মাণ করার। আমরা সেখানে শহীদ মিনার তৈরি করেই দেখাব।”
শহীদ মিনার তৈরির স্থানে জেনে-বুঝে কীভাবে মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সে প্রশ্ন রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জিনাতুন নেসা তালুকদার।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন খন্দকার বলেন, “জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্ত সরকার ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লজ্জাজনক। আশপাশের লোকেরা নিশ্চয়ই তাকে বিপথগামী করছে।”
স্বাধীনতার এত বছরেও রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে না পারাকে ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মান্নান।
তিনি বলেন, “২০২০ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোনাদিঘি সংলগ্ন পুরাতন সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছিলেন।
“আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। সেখানে মার্কেট নির্মাণের অপচেষ্টা করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য কামরুল ইসলাম মিঠু, সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযোদ্ধা একাত্তর রাজশাহী জেলার সাধারণ সম্পাদক শাবান আলী দিলীপ।
সঞ্চালনা করেন সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জল।