বরিশালে ইলিশকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপগুলো অন্য মাছের পোনা ধ্বংস থেকে রক্ষা করেছে বলে দাবি মৎস্য বিভাগের।
Published : 03 Nov 2023, 09:08 PM
নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে নামতেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে প্রচুর ইলিশ; সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে পাঙ্গাসও। তবে দাম আগের মতই রয়েছে।
শুক্রবার বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড মোকামে জেলেদের প্রচুর ইলিশ ও পাঙ্গাস মাছ নিয়ে আসতে দেখা গেছে। সকাল থেকে এ বাজারে জেলে, পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত।
এদিন পোর্ট রোডে ৯০০ থেকে হাজার মণ ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে এক কেজি ২০০ গ্রাম আকারের ইলিশ প্রতি মণ ৬২ হাজার দরে বিক্রি হয়েছে।
এ ছাড়া ৯০০ গ্রাম থেকে কেজি আকারের ইলিশ প্রতি মণ ৪২ হাজার টাকা; ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ ৩২ হাজার টাকা এবং প্রতি মণ জাটকা বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার টাকা দরে।
অন্যদিকে প্রতি মণ পাঙ্গাস মাছ ২১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে প্রচুর ইলিশ ওঠায় দাম কিছুটা কম বলে দাবি বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাসের।
দাম আগের মতই রয়েছে দাবি করে মাছ ব্যবসায়ী মো. রানা বলেন, মা ইলিশ শিকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বৃহস্পতিবার রাত থেকে জেলেরা নদীতে জাল ফেলেতে শুরু করেছে। ইলিশের পাশাপাশি জালে পাঙ্গাস ধরা পড়েছে। তবে ছোট আকারের ইলিশ বেশি।
মৎস্য কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র বলেন, বছরজুড়ে ইলিশের পেটে ডিম থাকা স্বাভাবিক। তাই ডিমওয়ালা ইলিশ উঠেছে। প্রধান প্রজনন মৌসুমের কারণে বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে যেটুকু বোঝা গেছে তাতে নদীতে মাছ আছে।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া এলাকার জেলে কাদের জানান, ভোররাতে কীর্তনখোলা নদীর লামছড়ি গ্রামের ত্রি-মোহনায় ইলিশ ধরার জন্য জাল ফেলেছিলেন। সেখানে ইলিশের পাশাপাশি আট কেজির একটি পাঙ্গাসও ধরা পড়েছে।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদের এলাকার বেশিরভাগ জেলের জালেই ইলিশের পাশাপাশি পাঙ্গাস মাছও ধরা পড়েছে।
মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী রোজেন জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে নদীর ইলিশ আসতে শুরু করেছে। প্রতিবছর এমন সময় ইলিশের সঙ্গে নদীর অন্যান্য মাছও পাওয়া যায়। যেখানে এবারেও বেশ ভালো পরিমাণে পাঙ্গাস পাওয়া যাচ্ছে।
নদীতে পাঙ্গাস পাওয়া বিষয়ে বিমল চন্দ্র বলেন, ইলিশের মত ডিম ছাড়ার জন্য এ সময়ে পাঙ্গাস মাছও নদীতে আসে। তাই প্রতিবছর এই সময়টাতে নদ-নদীতে প্রচুর পাঙ্গাস ধরা পড়ে।
মৎস্য বিভাগ যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে, তার সুফল জেলেরা পাচ্ছেন জানিয়ে বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “সারা বছর ধরে আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান থাকে। যেমন নির্ধারিত সময়ে ইলিশ ধরা, জাটকা না ধরা।
“এ ছাড়া কারেন্ট জালসহ ছোট ফাঁসের জাল ও চাই ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। এসবের মূল লক্ষ্য মাছের ছোট পোনাগুলো যাতে ধ্বংস না হয়।”
তিনি আরও বলেন, ইলিশকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপগুলো অন্য মাছের পোনা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছে। এর ফলে নদীতে পাঙ্গাস, আইড়, রামসোস, পোয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ফিরে এসেছে।
নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে জাল না থাকায় বাধাহীনভাবে পাঙ্গাস উপরে ওঠার সুযোগ পেয়েছে; ফলে এ মাছ নদী এলাকাজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে জানান তিনি।
পাঙ্গাস যেহেতু খাবার পছন্দ করে তাই যেখানে খাবার বেশি সেখানে এ মাছের দেখা মিলবে বলে মত এ মৎস্য কর্মকর্তার।