গার্ডার দুর্ঘটনা: ‘দুপুরে যাদের মিষ্টি হাতে দেখলাম সন্ধ্যায় শুনি তারা নেই’

শনিবার আশুলিয়ায় বিয়ে হয়েছিল রিয়া মনি ও হৃদয়ের।

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 August 2022, 09:23 AM
Updated : 16 August 2022, 09:23 AM

নববিবাহিত মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আনতে সোমবার মিষ্টি হাতে বের হয়েছিলেন ফাহিমা বেগম। কিন্তু আনন্দের সেই যাত্রাই যে তার অন্তিম যাত্রা হয়ে যাবে এমন ভাবতে পারেননি কেউই।

ফাহিমার প্রতিবেশী সালমা আক্তার বলেন, “সোমবার দুপুরে মিষ্টি হাতে তাদের যেতে দেখলাম। পরে সন্ধ্যায় শুনি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তারা সবাই মারা গেছে। শুনে খুবই খারাপ লাগছে। অথচ দুপুরেই আমার চোখের সামনে দিয়ে গেল।”

বিকালে রাজধানীর উত্তরার জসিম উদদীন সড়কে গার্ডার চাপায় নিহত ফাহিমা বেগমসহ পাঁচজনের মৃত্যুর পর এভাবেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে নিজের শোক প্রকাশ করছিলেন আশুলিয়ার খেঁজুর বাগান এলাকার আশরাফ উদ্দিনের আট তলা বাড়ির বাসিন্দা সালমা আক্তার।

তার প্রতিবেশি ফাহিমা বেগম এক বছর ধরে মেয়ে রিয়া মনিকে নিয়ে এই বাড়ির ছয় তলার ৬০৪ নম্বর ইউনিটের এক কক্ষে ভাড়া থাকতেন। ফাহিমার ছোট ছেলে ফাহাদ মাদরাসায় আবাসিক থেকে পড়ালেখা করে।

এই বাড়ির ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, গত শনিবার রিয়া মনি ও হৃদয়ের বিয়ে হয়। সোমবার দুপুরে আশুলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে মেয়েকে তার শ্বশুরালয় থেকে আনতে গিয়েছিলেন রিয়ার মা ফাহিমা বেগম ও খালা ঝরনা বেগম। সঙ্গে ছিল ঝরনা বেগমের দুই শিশু সন্তান।

“কিন্তু সন্ধ্যার পর খবর পাই মেয়ে নিয়ে ফেরার পথে দুর্ঘটনায় ফাহিমা বেগম ও তার বোন ঝরনা, শিশুরাসহ পাঁচজন মারা গেছে।”

শফিকুল আরও বলেন, রিয়ার বিয়ের কথাবার্তা পাকা হলে আমি তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করি। বিয়ের ঘরোয়া আয়োজনেরও ব্যবস্থা করে দেই বাড়ির ছাদে।

তিনি জানান, রিয়া মনি রেডিয়েন্স নামে একটি পোশাক কারখানায় ও তার মা ফাহিমা বেগম সিআইপিএল নামে আরেকটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ির জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার নওদত্ত এলাকায়। রিয়ার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক।

একাধিক প্রতিবেশি জানান, রিয়া মনির বাবা এ বাসায় থাকতেন না। তার মা ও ভাই ছাড়া এখানে তার নানা-নানি আসতেন। তবে বিয়ে উপলক্ষে গ্রাম থেকে রিয়ার খালা ঝরনা ও তার দুই সন্তান জান্নাত ও জাকারিয়াকে নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন।

স্থানীয় দোকানি আল-মামুন বলেন, “আমার দোকান থেকে মাঝে মধ্যে বাজার নিতেন ফাহিমা বেগম। তিনি কখনও বাকিতে বাজার নিতেন না। মানুষ হিসাবে অনেক ভালো ছিলেন। তাদের মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার খবর বিশ্বাসই করতে পারছি না।”

ঢাকায় দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই রিয়া মনিদের ভাড়া বাসায় যান আশুলিয়া থানার এসআই সুদীপ কুমার গোপ।

তিনি বলেন, “ফাহিমা তার মেয়ে রিয়া মনিকে নিয়ে আশরাফ উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা বাড়িওয়ালার সাথে যোগাযোগ করেছি। বর্তমানে তাদের বাসায় কেউ নেই। ঘর তালাবদ্ধ।”

সোমবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে জসিম উদদীন সড়ক এলাকার প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনের সড়কে ক্রেন দিয়ে গার্ডার নামানোর সময় এটি পড়ে একটি গাড়ির উপর।

সেই গাড়িতেই মেয়ে রিয়া মনিকে (২১) নিয়ে ফিরছিলেন ফাহিমা বেগম। সঙ্গে ছিলো রিয়ার স্বামী হৃদয় (২৬), ফাহিমার বোন ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। আর গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রিয়ার শ্বশুর রুবেল মিয়া (৬০)।

চাপাপড়া সেই গাড়ি থেকে হৃদয় ও রিয়া মনিকে উদ্ধার করা গেলেও প্রাণ হারান বাকি পাঁচজন।

আরও পড়ুন:

· গার্ডার চাপায় চিড়ে চ্যাপ্টা গাড়ি, ভেতরেই গেল ৫ প্রাণ

· উত্তরায় গার্ডার ধস: স্বজনদের হারিয়ে বেঁচে রইল নবদম্পতি

· এক বিআরটিতেই বারবার গার্ডার দুর্ঘটনা

· ক্রেনটি কাত হলে গার্ডারটি ‘উল্টো ঘুরে’ গাড়ির ওপর পড়ে