‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ ৪ জুন থেকে, পর্যাপ্ত আসনের দাবি

ট্রেনটি ডোমার, নীলফামারী, সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট, সান্তাহার, ঈশ্বরদী বাইপাস এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।

বিজয় চক্রবর্তী কাজলনীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2023, 01:17 PM
Updated : 30 May 2023, 01:17 PM

নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত দিনের বেলায় চলাচল শুরু করছে নতুন একটি আন্তঃনগর ট্রেন। আনন্দিত জেলাবাসীর দাবি, পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দের।

আগামী ৪ জুন সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তঃনগর এ ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন।

জেলার নামানুসারে ট্রেনটির আন্তঃনগর ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ নামকরণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি গ্রহণে ব্যস্ত সময় পার করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।

নীলফামারীবাসীর দাবি এবং এই পথে যাত্রী সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় ঢাকার সঙ্গে এ জেলার মানুষের নীবিড় সংযোগ স্থাপন করতে চিলাহাটি-ঢাকা পথে নতুন ট্রেন চালুর জন্য রেলপথ মন্ত্রণালকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিমাঞ্চল) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে নতুন একটি দিবাকালীন আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে রেলওয়ে। এরই মধ্যে ট্রেনটির ট্রায়াল শেষ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ হলেও ট্রেনটির নামকরণ এখনও হয়নি। তবে আমরা পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পক্ষ থেকে আন্তঃনগর নতুন ট্রেনটির নাম ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’ করার প্রস্তাব করে মহাপরিচালক বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছি।“  

তিনি বলেন, একটি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) ও ১১ বগি বিশিষ্ট ট্রেনটি সপ্তাহের শনিবার বাদে ছয় দিন নিয়মিত চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রেলপথে চলাচল করবে। ট্রেনটিতে এসি বার্থ, স্নিগ্ধা ও শোভন চেয়ার শ্রেণির আসন বিন্যাসের ব্যবস্থা রয়েছে।

ট্রেনটি চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন (৮০৬ ডাউন) থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে।

অন্যদিকে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (৮০৫ আপে) থেকে বিকাল সোয়া ৪টায় ছেড়ে চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটিতে মোট ৭৯২টি আসন থাকবে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম আরও বলেন, ট্রেনটি ডোমার, নীলফামারী,  সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, জয়পুরহাট, সান্তাহার, ঈশ্বরদী বাইপাস এবং বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।

নীলফামারী উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক এবং নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডিস্ট্রির সাবেক সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, এ জেলা থেকে নতুন আরেকটি ট্রেন চালুর সিদ্ধান্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। দীর্ঘদিন পরে হলেও তিনি জেলার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন।

তিনি বলেন, “এ জেলা থেকে ঢাকাগামী একমাত্র ট্রেন ছিল ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’। অনেক আন্দোলনের ফসল এ ট্রেনটি চালু হলেও আসন সংখ্যার অপ্রতুলতায় রেলপথের সুবিধা থেকে বঞ্চিত জেলাবাসী। নতুন এ ট্রেনটিতে পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দ দেওয়া না হলে আবারও আমরা বঞ্চিত হব।

পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনটির ২৩টি এসি বার্থ আসনের মধ্যে জেলা শহরের স্টেশনে বরাদ্দ মাত্র দুইটি। এ ছাড়া ১০টি এসি কক্ষের আসন এবং ৬০টি শোভন চেয়ার বরাদ্দ রয়েছে।

“এটি নীলফামারীর ট্রেন হলেও পার্বতীপুর, বিরামপুর, ফুলবাড়ি, জয়পুরহাট, সান্তাহার, আহসানগঞ্জ, নাটোর স্টেশনে পর্যাপ্ত আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ এসব স্টেশন হয়ে প্রতিদিন অন্তত ১১টির অধিক আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে।”

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, অন্যান্য রেলপথের তুলনায় চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু ৩৮৩ কিলোমিটার দূরত্বের চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে চলাচল করছে একমাত্র রাত্রিকালীন আন্তঃনগর ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’।

দেশের অন্যান্য পথে নতুন করে একাধিক ট্রেন চালু হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে নীলফামারী জেলাবাসীর দীর্ঘদিন থেকে নতুন একটি দিবাকালীন আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি ছিল।

“জেলার মানুষের কথা ভেবে চিলাহাটি-ঢাকা পথে নতুন একটি দিবাকালীন আন্তঃনগর ট্রেন উপহার দেওয়া প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”

এই ট্রেন চলাচল শুরু হলে ঢাকার সঙ্গে নীলফামারী জেলার মানুষের নীবিড় সংযোগ স্থাপিত হবে; তেমনি এই জেলার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দ্বার আরও মজবুত হবে বলে জানান জেলা প্রসাশনের এই কর্মকর্তা।    

এর আগে ২০০৭ সালে ১ ডিসেম্বর সৈয়দপুর থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে রাত্রিকালীন আন্তঃনগর ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ চলাচল শুরু করে। এরপর ২০১৫ সালের ওই ট্রেনটির গন্তব্য চিলাহাটি থেকে কমলাপুর পর্যন্ত করা হয়।

পরবর্তীতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন পথে একাধিক ট্রেন চালু করা হলেও ঢাকা-চিলাহাটি পথে একটিমাত্র ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ ট্রেন চলাচল করে।