ঈদ উল আযহা উপলক্ষে নলডাঙ্গা পৌরসভায় ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভিজিএফ সুবিধাভোগীদের মধ্যে দশ কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছিল।
Published : 23 Jun 2023, 01:03 PM
নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভায় ভিজিএফের চাল বিতরণের সময় সুবিধাভোগীদের ওপর হামলা ও মারপিটের অভিযোগে পৌর মেয়রসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাতে আহত মিঠুনের মা মর্জিনা বেগম বাদি হয়ে নলডাঙ্গা থানায় মামলাটি করেছেন বলে জানিয়েছেন থানার ওসি মো. আবুল কালাম।
মর্জিনা বেগম পৌরসভার পূর্ব সোনাপাতিল গ্রামের মৃত ভুট্টোর স্ত্রী।
মামলার আসামিরা হলেন, নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনির, তার ভাতিজা উপজেলার ছাতারভাগ (ডাকাতিভিটা) গ্রামের বকুল হোসেন মণ্ডলের ছেলে মো. সাগর মণ্ডল (৩০), ব্রহ্মপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে রহিদুল ইসলাম (৪৫) এবং তার ছেলে নিশান প্রামাণিক (২২), নীলডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে মো. রুবেল (৩৫) ও হলুদঘর জাঙ্গালপাড়া গ্রামের মৃত হেফাজুর রহমানের ছেলে মো. মিলন (৩৮)।
এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৮-১০ জনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ওসি আবুল কালাম জানান, আসন্ন ঈদ উল আযহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নলডাঙ্গা পৌরসভায় ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জনসাধারণের মধ্যে দশ কেজি করে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। এ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে চাল গ্রহণ করছিলেন প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষ।
মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, দুপুরে পূর্ব শত্রুতার জেরে মেয়র মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য আসামিরা চাল নেওয়ার লাইনে থাকা কয়েকজনকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করে এবং ধাক্কা দিয়ে পৌরসভা থেকে বের করে দেন।
এরপর পৌরসভা গেটের সামনে ধারালো ছোরা, লোহার রড, ও বাশের লাঠি দিয়ে বাদির বড় ছেলে মো. মিঠুন, মেজো ছেলে রকি, ছোট ছেলে নয়ন, ভাই মো. জেলার ও ছেলের বন্ধু মো. মনিরুলকে মেয়রের হুকুমে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করে বলে এজাহারে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সোনাপাতিল মহল্লার বাসিন্দা শাহিন, জেলার, রকি, নয়ন, মিঠুন, রানা, মর্জিনা, নলডাঙ্গার রাজিব, আশিক, পুর্বসোনাপাতিল মহল্লার আলমঙ্গীর, মনিরুল, হলুদঘর মহল্লার স্বাধীনসহ অন্তত ২০ জন লাইনে দাঁড়ানো সুবিধাভোগীকে হাতুড়ি ও কাঠের বাটাম দিয়ে বেদম মারপিট করে পৌরসভা থেকে বের করে দেন মেয়র মনিরুজ্জামানসহ তার লোকজন।
এ অবস্থায় লোকজন বাধা দিতে গেলে তাদের ওপরও চড়াও হন তারা। এ সময় ক্ষুরের আঘাতে মনিরুল ইসলামসহ চারজন মারাত্মক আহত হন।
আহতদের ৪ জনকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নলডাঙ্গা পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম পিয়াস জানান, পৌরসভার নানাবিধ অনিয়মের প্রতিবাদ করাসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে।
ওই বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার তার ওয়ার্ডের সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের ওপর মেয়র মনিরসহ তার সহযোগী রহিদুল, নিশান, মিলন, রুবেল, সাগর ও আরও অনেকে মিলে হামলা চালায় এবং হাতুড়ি, বাটাম দিয়ে বেদম মারপিট করে পৌরসভা থেকে বের করে দেন।
প্যানেল মেয়র শরিফুলের অভিযোগ, ওই সুবিধাভোগীরা তার অনুসারী হওয়ায় এমনটি করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি নিজেও পৌর কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বাধা দিতে গেলে তার দিকে তেড়ে আসেন মেয়রসহ তার সমর্থকরা।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ উপলক্ষে গরিব ও দুস্থদের মাঝে ভিজিএফের চাল বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন। সেই চাল বিতরণ করতে গিয়ে সুবিধাভোগীদের মারপিট করে অন্যায় করেছেন। তারা এই অন্যায়ের বিচার চান।
এ ছাড়া এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ দেওয়া হবে বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি।
এদিকে এ বিষয়ে মোবাইলে যোগাযোগ করলে নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনির এসব অভিযোগ ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, “চাল বিতরণের সময় কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল যুবক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছিল। তাদের চলে যেতে বললে খারাপ আচরণ করে। এসময় উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু মারপিট বা ক্ষুরের আঘাতের ঘটনা সঠিক নয়। “
তিনি অভিযোগ করেন, “তারা চাল নিয়ে ঘরের মধ্যে ভিড় করে দাঁড়িয়েছিল। অন্যদের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য তাদের চলে যেতে বলা হয়।”
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয় এবং শরিফুল ইসলাম পিয়াসের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলেও জানান পৌর মেয়র মনিরুজ্জামান মনির।
নলডাঙ্গা থানার ওসি মো. আবুল কালাম বলেন, “মামলাটি যথাযথভাবে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”