যশোরের শার্শায় একটি সমিতির নামে স্থানীয় কয়েকশ গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে একদল লোক পালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তাদের একজনের নাম আশিক বললেও বাকি তিনজনের নাম কেউ বলতে পারছে না।
তাদের ভাষ্যে, 'পল্লী উন্নয়ন সমিতি'র সরকারি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ম-৭৫৮/১৯৯০। তারা নিজেদের এনজিও কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন।
তবে এই নামে কোনো বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) আছে কিনা তা যাচাই করা যায়নি।
ভুক্তভোগীরা বলেন, এক সপ্তাহ আগে চারজন লোক উপজেলার জামতলা সামটা গ্রামে 'পল্লী উন্নয়ন সমিতি' নামের একটি অফিস খোলেন। তারা সামটা গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনিরের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ‘শার্শা জোনাল অফিস’ পরিচয়ে কার্যক্রম চালু করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই লোকগুলো বলেছিলেন – যে ব্যক্তি পাঁচ হাজার টাকা দেবে তাকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ, যে ১০ হাজার দেবে তাকে এক লাখ এবং ২০ হাজার টাকা দিলে দুই লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে।
এই প্রলোভনে পড়ে শার্শা ও ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ২০০ মানুষ তাদের টাকা দিয়েছে বলে এলাকার লোকজন জানান।
ওই লোকজনকে ঘরভাড়া দেওয়া কিংবা তাদের কাছে টাকা বিনিয়োগ করার আগে তাদের পরিচয়ও কেউ জেনে নেয়নি। বাড়ির মালিক তাদের জাতীয় সনদপত্র তো দেখেননি, এমনকি তাদের নামও জানেননি।
বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং থানা পুলিশ শোনেনি বলে জানায়। এ ঘটনা কোনো মামলাও হয়নি।
ওই অফিস থেকে শার্শা উপজেলার জামতলা, সামটা, টেংরা, মহিশাকুড়া, হাড়িখালি; ঝিকরগাছা উপজেলার দেউলি, পাঁচপোতা, মাটিকোমরা, নায়ড়া ও তার আশপাশ এলাকার অন্তত দুই শতাধিক হতদরিদ্র মানুষকে ঋণ দেওয়ার কথা বলে তাদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
ঘর ভাড়া নেওয়ার কয়েকদিন পর সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে অফিস উদ্বোধন করার কথা বলে ওই লোকজন স্থানীয় একটি ডেকোরেটর ডেকে অফিস ও আশপাশ এলাকায় সাজসজ্জা করান।
জামতলা বাজারের মডার্ন ডেকোরেটরের মালিক আল-মামুন বলেন, “সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অফিস উদ্বোধনের জন্য স্টেজ, প্যান্ডেল তৈরি করি। সবকিছু শেষ হওয়ার পর কিছু টাকা বায়না দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু রোববার বিকাল থেকে তারা লাপাত্তা। তাদের ফোনও বন্ধ রয়েছে।”
লাপাত্তা হওয়ার সংবাদ পেয়ে ঋণ প্রত্যাশীরা সোমবার সকাল থেকে ওই অফিসের সামনে এসে জমায়েত হয়েছিলেন।
সোমবার অফিসের সামনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ভুক্তভোগীরা জানান, সামটা গ্রামের আব্দুল জলিলের স্ত্রী নবিছন নেছা ৬৫০০ টাকা, আয়ুব আলির স্ত্রী আফরোজা খাতুন ১০ হাজার টাকা, মাসুমের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ১০০০ টাকা দিয়েছেন।
মহিষাকুড়া গ্রামের মফেজ উদ্দিন ১১ হাজার টাকা, চেয়ারবানু ১৮ হাজার টাকা, রহিমা খাতুন ৩৩ হাজার টাকা, জাহানারা বেগম ১১ হাজার টাকা, সামটা গ্রামের রবিউল ইসলাম ১১ হাজার টাকা, জছিমন ১১ হাজার টাকা, হাড়িখালি গ্রামের নবিছন নেছা ১১ হাজার টাকা, আফরোজা বেগম ২২ হাজার টাকা, ফিরোজা বেগম ১১ হাজার, লিটন ৭৫০০ টাকা, শেখ আব্দুল দলিল ৫৫০০ টাকা, সখিনা খাতুন ৫৫০০ টাকা, ইশারুল ইসলাম ২১ হাজার ৫০০ টাকা, টেংরা গ্রামের রুপিয়া বেগম ২০ হাজার টাকা, সুমাইয়া খাতুন ২২ হাজার টাকা, আনারুল ইসলাম ২০ হাজার টাকা, ছালমা খাতুন ৫ হাজার টাকা, নায়ড়া গ্রামের শহিদা খাতুন ৩৩ হাজার টাকা দিয়েছেন বলেও জানান।
টেংরা গ্রামের সুমাইয়া খাতুন বলেন, তিনি ২২ হাজার টাকা আমানত হিসেবে জমা দিয়েছেন। স্বামী বিদেশ যাবেন বলে তিন লাখ টাকা দরকার; তাই সোমবার আমানতের বাকি ১০ হাজার টাকা দিতে এসে দেখেন সবাই লাপাত্তা।
সামটা গ্রামের রবিউল ইসলাম বলেন, “এক লাখ টাকা ঋণ দেবে বলে ওরা আমার কাছ থেকে ১১ হাজার টাকা আমানত নিয়েছে। সোমবার ঋণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এসে দেখি সবাই হাওয়া।”
শেখ আব্দুল দলিল বলেন, “হাড়িখালি বাজারে আমার কাঁচামালের দোকান আছে। ওরা আমার ৫০ হাজার টাকার ঋণ দিতে চেয়েছিল। দুবছরে পরিশোধ করতি হবে। মাসিক কিস্তি ২৫০০ টাকা। তাই ওদের আমানত দিলাম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা।”
হাড়িখালি গ্রামের আফরোজা বেগম জানান, তার বাড়িতে কেন্দ্র গঠন করে দুই বছর মেয়াদে দুই লাখ টাকা করে ঋণ দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেকের থেকে ২০ হাজার করে টাকা জামানত নেয়।
ঋণ নিতে এসে দেখেন অফিসে ফাঁকা; তাদের ফোন নম্বরও বন্ধ বলে জানান তিনি।
ভাড়া দেওয়া বাড়ির মালিক মনিরুজ্জামান জানান, এক সপ্তাহ আগে মাসিক ২৫ হাজার টাকায় তার বাড়িটি ভাড়া নেন। সোমবার অফিস উদ্বোধন করা হবে। ওই সময় অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে তিন লাখ টাকা জামানত দিয়ে চুক্তিনামা করবেন বলে তারা বলেছিলেন।
“রোববার বিকাল থেকে আমার বাড়ির রুমগুলো ফেলে রেখে এনজিওর কর্মকর্তারা পালিয়েছে।”
স্থানীয় বাগআচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, “এভাবে একটি এনজিও এসে অফিস ভাড়া করেছে, তা আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমি জানি না। এ ব্যাপারে কেউ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।”
শার্শা থানার ওসি এসএম আকিকুল ইসলাম বলেন, “এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কোনো অভিযোগও আমরা এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”