শহীদ মিনার থেকে থানায়, পরে মুচলেকায় মুক্ত গণসংহতি নেতা

দুজন গণমাধ্যমকর্মী ঘটনার দৃশ্য ধারণ করতে গেলে তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে৷

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Feb 2023, 12:18 PM
Updated : 22 Feb 2023, 12:18 PM

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে শহীদ মিনার থেকে গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারীকে থানায় নিয়ে দেড়ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

দুজন গণমাধ্যমকর্মী ঘটনার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করতে গেলে তাদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে৷

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ ঘটনা ঘটে৷

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশের বাধার মুখে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিবাদী ব্যানার কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়৷ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ওই ব্যানারে লেখা ছিল ‘একুশের উচ্চারণ, দূর হ দুঃশাসন’৷

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুর দিকে পুলিশের বাধায় ব্যানারটিতে কালো কাপড় লাগানো হয়৷ পরে এ কালো কাপড় বাঁধা অবস্থাতেই শহীদ মিনারে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলে৷

গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনের অভিযোগ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর থেকে শহীদ মিনারে থাকা লোকজনকে শহীদ মিনার থেকে বেরিয়ে যেতে বলে পুলিশ৷ এর প্রতিবাদ জানালে তার সঙ্গে পুলিশ ‘অসদাচরণ’ করে।

তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহীদ মিনারের উত্তর পাশে দাঁড়িয়ে হালিম খাচ্ছিলেন তিনি এবং গণমাধ্যমকর্মী সোহেল রানা৷ এ সময় একজন পুলিশ সদস্য এসে তাদের শহীদ মিনার ত্যাগ করতে বলেন৷ পরমুহূর্তে আরেক পুলিশ সদস্য তাদের শহীদ মিনার থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন৷

দুজন পুলিশ সদস্যই তাদের সঙ্গে ‘মারমুখী’ আচরণ করেন বলে তরিকুলের অভিযোগ৷

Also Read: নারায়ণগঞ্জে কালো কাপড়ে ঢাকা পড়ল প্রতিবাদী ব্যানার

তরিকুল বলেন, হালিম খাওয়া বন্ধ করে মুহূর্তের মধ্যে তাদের শহীদ মিনার থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন৷ পুলিশ সদস্যদের হাতে বাঁশের লাঠি ছিল৷ তারা মারমুখী আচরণ করলে তারা প্রতিবাদ জানান৷

শহীদ মিনারে প্রবেশ বা রাতের ওই সময়ে অবস্থান না করার বিষয়ে কখনোই কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না উল্লেখ করে তরিকুল বলেন, “কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যেহেতু করছি না, এ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমি তাদের এ আচরণের প্রতিবাদ জানালে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমার সাথে মারমুখী আচরণ করে পুলিশ ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে যান৷ প্রায় দেড় ঘণ্টা থানায় রাখার পর মুচলেকা নিয়ে রাত ১টার দিকে থানা থেকে ছাড়েন আমাকে৷”

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ নারায়ণগঞ্জ’-এর প্রতিবেদক সোহেল রানাও পুলিশের অসদাচরণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “পুলিশ আমার সাথেও অসদাচরণ করেছে৷ পরে তরিকুল সুজনকে পুলিশ ভ্যানে তোলার ছবি তুলতে গেলে আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে এই মুহূর্তে ঘটনাস্থল ত্যাগ না করলে আইসিটি মামলা দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন এবং মারমুখী আচরণ করেন৷ পরে আমি নিরাপত্তার খাতিরে সেখান থেকে কিছুটা দূরত্বে চলে যাই৷ পুলিশের এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই কাম্য না৷”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, “বিষয়টি একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল৷ কাউকে আটক করা হয়নি৷ তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশ ভ্যানে উঠে থানায় এসেছিলেন৷ পরে বিষয়টি থানাতেই মীমাংসা করা হয়৷ আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি মুচলেকা রাখা হয়েছে৷”