ঈদে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে উপচে পড়া ভিড়

কাউন্টারে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে অনেক পর্যটক ‘কালোবাজারির কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে’ টিকেট সংগ্রহ করেছেন।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 April 2023, 06:57 PM
Updated : 23 April 2023, 06:57 PM

ঈদের দ্বিতীয় দিনে প্রথম দিনকে ছাড়িয়ে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় ছিল।

রোববার পার্কের প্রধান ফটকের বাইরে টিকেট কাউন্টার এবং কোর সাফারি পার্কের সামনে টিকেটের জন্য পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। 

পার্কের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকার টিকেট কাউন্টারে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় অনেক পর্যটক কালোবাজারির কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট সংগ্রহ করেছেন। 

ঈদের দিন শনিবার এর চেয়ে কম ভিড় ছিল বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। 

রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের প্রধান ফটকের সামনে কাউন্টার থেকে টিকেট ক্রয় করার জন্য হাজারো মানুষ কয়েক সারিতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী নর-নারী এবং শিশুও রয়েছে। 

নরসিংদী থেকে আসা আবু সাইদ বলেন, ভিড় এড়াতে ঈদের দ্বিতীয় দিনে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে পার্কে আসেন। কিন্তু টিকেট কাউন্টারে এতো ভিড় যে আধাঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাউন্টার পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পাননি। 

“শেষে তিনশ টাকার বিনিময়ে এক কালোবাজারির কাছ থেকে টিকেট সংগ্রহ করে ভেতরে ঢুকি। পরে ভেতরে কোর সাফারি পার্কে বাঘ, সিংহ, ভালুক, জিরাফ, জেব্রা, বনগরুসহ বিভিন্ন প্রাণি উন্মুক্ত পরিবেশে দেখার জন্য কাউন্টারে টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি একই রকমের ভিড়।

“সেখানেও পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন। শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে কোর সাফারি পার্কে ঢুকতে টিকেটের জন্য প্রায় তিনশ জনের পেছনে গিয়ে লাইনে দাঁড়াই। এখন বিকাল ৩টা; এখনও টিকেট কাটতে পারিনি।” 

কুমিল্লার লাকসাম থেকে পার্কে আসা মো. আবু তালেব জানান, তিনি স্ত্রী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শনিবার দুপুরে গাজীপুরের সাফারি পার্কে আসেন। অনেক কষ্টে ভেতরে ঢোকার টিকেট ক্রয় করেন। পরে উন্মুক্ত পরিবেশে বাঘ, সিংহ, হরিণ, জিরাফ, বিস্ট, ভালুক দেখার জন্য কোর সাফারি পার্কে যান। 

“কিন্তু সেখানে ওইসব প্রাণী দেখার টিকেট কেনার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও টিকেট কিনতে না পেয়ে পাশের সাফারি কিংডমে গিয়ে পাখিশালায় ম্যাকাউ, প্যারটসহ বিভিন্ন রকমের দেশি-বিদেশি পাখি দেখি।”

এছাড় হেঁটে হেঁটে ধনেশ এভিয়ারিতে ধনেশ পাখি, পেঁচা কর্ণারে পেঁচা, ময়ুর বেষ্টনীতে ময়ুর, পাশে থাকা লেমুর, শকুন, জলহস্তী, উটপাখি, প্রজাপতি কর্ণারে প্রজাপতি, হাতি শো গ্যালারিতে হাতি, কুমির পার্কে কুমির, জলাশয়ে থাকা রং-বেরংয়ের মাছ, ঝুলন্ত ব্রিজ, শিশু পার্কের বিভিন্ন কিছু উপভোগ করে সময় শেষ করেন বলে জানান।    

শেরপুর থেকে আসা মো. আবুল কালাম তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যান সাফরি পার্কে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে। কোর সাফারি পার্কের টিকেট জোগাড় করতে না পেরে হাতিতে চড়ে আনন্দ করেছেন তার ছেলে মেয়েরা। প্রকৃতিক পরিবেশে পার্কের  অন্যান্য অংশ ঘুরে এবং লেক ও ফুলের বাগানে বসেই আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়েছেন তারা। 

ঢাকার উত্তরা থেকে সাফারি পার্কে মোসা. কামরুন্নাহার যান তার এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে।

তিনি জানান, অনেক কষ্টে টিকেট সংগ্রহ করে পার্কে থাকা বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ, ম্যাকাউ, টিয়া, প্রজাপতি, জলহস্তী, চিত্রা হরিণ, মায়া হরিণ, মিঠা পানির কুমির, ময়ূর, শকুন জেব্রা, হাতি,উট পাখি, লেমুর, জিরাফ, বন গরুর বিচরণ উপভোগ করেছেন। 

দুপুরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পার্কে ঘুরতে আসেন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় হাই সিকিউরিটি কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা। 

তিনি  বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উন্মুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন বণ্য প্রাণী ও পাখির বিচরণ উপভোগ করতে সাফারি পার্কে আসেন। আজকে রোদ না থাকায় এবং আবহওয়া ঠান্ডা থাকায় খুব ভালোভাবে উপভোগ করেছেন। তবে টিকেট সংগ্রহের বিড়ম্বার কথা স্বীকার করে বলেন এটা আরও সহজ করা দরকার। 

ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে সাফারি পার্কে এসেছিলেন হাবিবুল ইসলাম ও  সাহেরা খাতুন দম্পতি। সাফারি পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা। 

মোটরসাইকেল পার্কিংয়ে ‘অতিরিক্ত টাকা’ আদায় 

পার্কের প্রধান ফটকের অদূরে রয়েছে মোটরসাইকেল পার্কিং জোন। সেখানে পাকিংয়ের জন্য ২৫ টাকার টিকেট দেওয়া হলেও ৫০ টাকা আদায়ের অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। 

পার্কের মোটরসাইকেল পার্কিং জোনে পার্কিং করতে গিয়ে ২৫ টাকার টিকেট দেওয়া হলেও সেখানকার আদায়কারীরা ৫০ টাকা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে যাওয়া আব্দুল হামিদ। 

বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানালে তাকে হেনস্তা করেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। 

একই অভিযোগ করেছেন, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে পার্কে বাইক নিয়ে যাওয়া ইফতেখার আলম। 

পাখিশালায় ‘অতিরিক্ত টাকা’ আদায় 

কাউন্টার থেকে চার পাঁচ ইভেন্ট দেখার জন্য ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ম্যাকাউ এভয়ারিতে দায়িত্বরত বাচ্চু মিয়া ম্যাকাউ পাখিটি পর্যটকের হাতে বা কাঁধে তুলে দিয়ে ছবি উঠানোর সুযোগ দিয়ে পর্যটকদের প্রতিজনের কাছ থেকে টিকেট ছাড়া অতিরিক্ত ৩০ টাকা টাকা করে আদায় নিচ্ছেন।

সাফারি পার্ক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন দর্শনার্থী কম হলেও পরের দিন পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ভিড় ভেড়ে গেছে। প্রথম দিন অন্তত ৮ হাজার এবং দ্বিতীয় দিন ১৬ হাজারের উপরে দর্শনার্থী পার্কে ঘুরতে এসেছেন। 

তিনি টিকেট কালোবাজারি, মোটরসাইকেল পার্কিংয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ এবং পাখিশালায় অনৈতিকভাবে টাকা নেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিষয়গুলো আমার নলেজে নেই। জেনে জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

টিকেট কাউন্টারে ও সাফারি পার্কে বিড়ম্বার বিষয়ে তিনি বলেন, “কোর সাফারি পার্কে পর্যটক পরিবহনের গাড়ি সংকট রয়েছে। বর্তমানে জীর্ণশীর্ণ ৮টি গাড়ি দিয়ে পর্যটক পরিবহন করা হচ্ছে। এখানে কমপক্ষে আরো ৫টি গাড়ি দরকার। এছাড়া পার্কে জনবল সংকটের কারণেও পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”