“ঝড় শুরু হলে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে গরুটি বেঁধে পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ গাছ ভেঙে গরুর উপর পড়লে সেটি ঘটনাস্থলে মারা যায়।”
Published : 16 Jun 2024, 10:03 AM
ফেনীতে ঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বজ্রপাতে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন অন্তত তিনজন।
এছাড়া ঝড়ে গাছ চাপা পড়ে চারটি গবাদিপশু মারা গেছে। বাড়ি-ঘর বিধস্ত ও অর্ধশতাধিক গাছ উপড়ে পড়ে আঞ্চলিক সড়কে যোগাযোগ ব্যাহত হয়েছে।
শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বজ্রপাতে নিহত ২৮ বছর বয়সী রোকসানা আক্তার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের উত্তর মন্দিয়া গ্রামের বাশু মিয়া বাড়ির বাবুল মিয়ার স্ত্রী।
ঝড়ের সময় মাঠে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয় বলে ছাগলনাইয়া থানার ওসি হাসান ইমাম জানিয়েছেন।
রোকসানার স্বামী বাবুল মিয়া বলেন, “ঝড় শুরু হলে আমার স্ত্রী বাড়ির পাশে জমি থেকে গরু আনতে যায়। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
“রোকসানাকে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
এদিকে পশুর হাটে নেওয়ার পথে বজ্রপাতে ফুলগাজীর মুন্সীরহাট ইউনিয়নের নোয়াপুর গ্রামে কোরবানির গরু, ঝড়ের কবলে গাছ উপড়ে পড়ে ফুলগাজী বাজারে একটি গরু, গাছের নিচে চাপা পড়ে ফুলগাজীর বাশুড়া গ্রামে একটি গরু ও ছাগলনাইয়ায় একটি মহিষের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, বজ্রপাত ও ঝড়ে ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী উত্তর জামমুড়া এলাকায় মা-মেয়েসহ তিনজন আহত হয়েছেন।
তারা হলেন- মো. আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সামছুন্নাহার (৪২), এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে ফারহানা আক্তার (২১) এবং ভগ্নিপতি মোহাম্মদ মোস্তফা (৫২)।
মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, “বজ্রপাতে আহত আমার মেয়ে ও স্ত্রী ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আর ভগ্নিপতি জামমুড়া গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন।”
ফুলগাজীর মুন্সিরহাট এলাকার কৃষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, “অনেক কষ্ট করে কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য গরু লালন-পালন করেছিলাম। ফুলগাজী গরুর হাটে বিক্রির জন্য গরুটি নিয়ে বের হই।
“পথে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে স্থানীয় মহিলা কলেজের সামনে রাস্তার পাশে গরুটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে আমি পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ গাছ ভেঙে গরুর উপর পড়লে গরুটি ঘটনাস্থলে মারা যায়। আমার অনেক টাকার ক্ষতি হয়ে গেল।”
ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, তার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বসন্তপুর, বাশুড়া এলাকায় ১৫টির বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি রয়েছে।
এছাড়া বৈদ্যুতিক লাইনে গাছ পড়ে বেশকিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে জানান তিনি।
ঝড়ে ছাগলনাইয়ার কালাপুল থেকে রেজুমিয়া পর্যন্ত অন্তত ৫০টি গাছ উপড়ে ও ভেঙে গেছে বলে ছাগলনাইয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, “গাছ উপড়ে পড়ে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। খবর পেয়ে তাদের একটি দল গিয়ে গাছ কেটে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।”
ওসি নিজাম উদ্দিন বলের, ফেনী-পরশুরাম সড়কের ফুলগাজী বাজারে বড় একটি গাছ উপড়ে পড়েছ ঝড়ে। গাছটি কেটে সন্ধ্যার পর যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
ঝড়ে ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বলে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান জানান।
কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “রাতের মধ্যে তা নির্ধারণ করা যায়নি। বৃষ্টি বন্ধ হলে রোববার সকাল থেকে মেরামতের কাজ শুরু হবে।”