চার দিন আগে রাজশাহীর বাগমারায় দাবি করা চাঁদা না পেয়ে পুকুরসহ জমি লিজগ্রহীতাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
Published : 09 Nov 2024, 01:18 AM
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় দাবি করা চাঁদা না পেয়ে পুকুরসহ ১৩ একর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।
এই কাজে স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘হেলমেট বাহিনীর’ সদস্যদেরকে কাজে লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে এরা সে সময়ের ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। এখন কাজ করছেন বিএনপি নেতার হয়ে।
সম্প্রতি উপজেলার কনোপাড়া গ্রামের দুলালীপাড়া আন্ধিয়ার বাগানের ব্যক্তি মালিকানাধীন এ পুকুরসহ জমি লিজ নেন স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের চার নেতাসহ পাঁচজন।
৪ নভেম্বর লিজগ্রহীতারা মাছ ছাড়ার জন্য পুকুর ঘাটে গেলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
এ ঘটনায় থানায় দুপক্ষ মামলা করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। তাদের অভিযোগ, এজাহার পাল্টিয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাগমারা থানার ওসি তৈহিদুল ইসলাম বলেন, উভয়পক্ষের আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আন্ধিয়ার বাগানের পুকুরসহ জমির পরিমাণ প্রায় ১৩ একর। এর মধ্যে গোয়ালকান্দির এনায়েতুল হক বিন্দু, নিমপাড়ার নুরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান, খলিলুর রহমান ও অনন্তপাড়ার শাহজামালের জমি রয়েছে ১২ একর। বাকি এক একর অন্য তিনটি পরিবারের।
জমির মালিকদের মধ্যে খলিলুর রহমান, মাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং শাহজামাল মাড়িয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তারেক রহমান প্রজন্ম দলের মাড়িয়া ইউনিয়ন শাখার সভাপতি জিয়াউর রহমান।
২৫ অক্টোবর মালিকদের কাছ থেকে পুকুরসহ জমি লিজ নেন উপজেলার বড়বিহানলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান মিলন, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক কনপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা, গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুর রউফ হিটলার এবং ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান মিল্টন। ওইদিন লিজের চুক্তিনামা করা হয়।
শর্ত অনুযায়ী ৪ নভেম্বর গোলাম মোস্তফা, আব্দুর রউফ হিটলার এবং তাদের আরেক অংশীদার দুলালিপাড়ার রায়হান আলী পুকুরের লিজ বুঝে নিয়ে মাছ ছাড়ার জন্য যান। এ সময় তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
লিজ গ্রহীতাদের অভিযোগ, দুলালীপাড়া গ্রামের ‘জালাল বাহিনীর’ লোকজন তাদের ওপর হামলা করেছে। জালাল উদ্দিন গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন সরকারের ‘হেলমেট বাহিনীর’ প্রধান হিসেবে পরিচিত। তাদের বিরুদ্ধে অতীতে নানা অভিযোগ ছিল।
তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জালাল ও তার অনুসারীরা স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার বাহিনী হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। তারা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাদের বেশকিছু পুকুর দখল ও মাছ লুটেও অংশ নেয়।
লিজগ্রহীতা গোলাম মোস্তফা বলেন, “ঘটনার দিন বিকালে লিজ নেওয়া পুকুর ও জমি পরিদর্শন করে কবে কীভাবে মাছ ছাড়ব, সেসব বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করছিলাম। এ সময় জালাল এসে আমাদের কাছে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে এই পুকুরে মাছ চাষ করতে দেওয়া হবে না বলে জানান।
“এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যন্ত জালালের ‘হেলমেট বাহিনী’ এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাদের পিটিয়ে জখম করে চলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে আমাকেসহ পাঁচজনকে উদ্ধার করে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়।”
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ওই দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি। পরদিন অভিযোগ নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে যান তিনি।
পরে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বাগমারা থানা-পুলিশকে ফোন দিলে ওসি ৬ নভেম্বর সকালে থানায় ডাকেন বলে জানান গোলাম মোস্তফা।
তিনি বলেন, “সারাদিন থানায় বসিয়ে রেখে রাত ৯টার দিকে অভিযোগ এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তবে আমি যে অভিযোগ নিয়ে গেয়েছিলাম, সেটি পরিবর্তন করে ওসির সাজানো এজাহারে সাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছে।
“এ ছাড়া আমাদের মামলা নথিভুক্তের তিন ঘণ্টা আগে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা নথিভুক্ত করা হয়।”
জমির মালিক এনায়েতুল হক বিন্দুর জামাতা এস এম সাকিল আলম বলেন, “যখন যে ক্ষমতায় আসে সে দলের নেতারা আমাদের জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এতে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হই, বিপরীতে যারা লিজ নেন তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন।
“ক্ষমতার পালা বদলে আমাদের জমির ওপর কিছু বিএনপি নেতাদের চোখ পড়েছে। তারা আমাদের লিজ দেওয়া পুকুর ও জমি দখলের চেষ্টা করছেন।”
হামলা ও চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে জালাল উদ্দিনকে মোবাইল করা হলে তিনি অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি বকুল সরদার বলেন, “ওই পুকুর ও জমির লিজ বা দখলের চেষ্টার বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
“ওই ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তবে কেউ যদি আমাকে ডাকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার কাছে যাওয়া আমার দায়িত্ব। সে কারণে জালালের সঙ্গে থানায় গিয়েছিলাম।”
মামলার এজাহার পরিবর্তন করার কথা অস্বীকার করে ওসি তৈহিদুল ইসলাম বলেন, “যাদের অভিযোগ আগে পেয়েছি তাদেরটি আগে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।”
উভয়পক্ষের আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।