সওজের মালিকানাধীন একের পর এক গাছ হত্যা করা হলেও দোষীদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সারছে অধিদপ্তর।
Published : 14 Sep 2024, 11:08 AM
খাগড়াছড়িতে বাকল বা ছাল তুলে রেইন ট্রি বা ‘বৃষ্টি বৃক্ষ’ হত্যা চলছেই। নতুন করে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের অন্তত আটটি বৃক্ষের বাকল তুলে নিয়েছে দুবৃর্ত্তরা।
খাগড়াছড়ির জেলা সদরের ছোটনালা এলাকায় বাকল তুলে নেওয়া এ গাছগুলোর বয়স ২০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত। মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধীরগতিতে সেগুলো মারা যেতে শুরু করেছে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের খাগড়াছড়ির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. তৌহিদুল বারী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মারা যাওয়ার পর গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়া যায়। তাই কয়েক বছর ধরে একটি চক্র সড়কের দুই পাশের বৃক্ষগুলো পর্যায়ক্রমে বাকল তুলে হত্যা করছে।
এভাবে সওজের মালিকানাধীন একের পর এক গাছ হত্যা করা হলেও দোষীদের কোনো শাস্তি হচ্ছে না। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেই দায় সারছে অধিদপ্তর।
খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফরিদ মিঞা বলেন, “গাছের বাকল তুলে নেওয়াকে ‘গার্ডলিং’ বলে। একটা বৃক্ষ বা গাছ শেকড় থেকে ক্যাম্বিয়াম লেয়ারের মাধ্যমে মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে।
“গাছের বাকল তুলে ফেললে ক্যাম্বিয়াম লেয়ার কাজ করতে পারে না। এতে একটা বৃক্ষ ধীরে ধীরে পাতাশূন্য হয়ে। এক পর্যায়ে গাছের ডালপালা শুকিয়ে যেতে শুরু করে এবং গাছটি মারা যায়।
“একবার বাকল তুলে ফেলা হলে কিছু প্রজাতির গাছ সঠিক পরিচর্যা পেলে বেঁচে থাকলেও রেইন ট্রির ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। গাছগুলিকে নীরবে হত্যা করতেই জেনে-বুঝেই এভাবে বাকল তুলে ফেলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “সড়ক বিভাগের গাছগুলোর বাকল তুলে নেওয়া হলেও তারা এই বিষয় বন বিভাগের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তারা আমাদের (বনবিভাগ) সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।"
এভাবে গাছ হত্যায় ক্ষোভ জানিয়েছে পরিবেশবাদীরাও।
পিটাছড়া বন ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল বলেন, “খাগড়াছড়ি জেলায় বছরের পর বছর রাস্তার পাশের বর্ষীয়ান গাছগুলোকে বিভিন্ন কৌশলে মেরে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। যারা এইভাবে মেরে কেটে নিয়ে যায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার।
পাশাপাশি সড়ক বিভাগের কেউ এর সঙ্গে জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দিনের পর দিন সড়ক বিভাগের নাকের ডগায় এই অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসন, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে এই ধরনের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের উপায় বের করতে হবে।”
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান বলেন, “এর আগেও সড়ক বিভাগের একাধিক বৃক্ষ এই বাকল তুলে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা সে সময়ে সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা আমাদের জানা নেই। আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি।
“যেহেতু আমরা থানায় অভিযোগ করেছি বাকি দায়িত্ব থানার। নতুন করে ছোটনালা এলাকায় আটটি বৃক্ষের বাকল তুলে নিয়েছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। আমি এসডিকে (উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী) আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।”
সড়ক ও জনপদ বিভাগের পার্বত্য অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। এই ঘটনায় কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেব।”
সদর থানার ওসি মোহাম্মদ বাতেন মৃধা বলেন, “গাছের বাকল তুলে ফেলায় থানায় জিডি করা হয়েছে। রাতের আঁধারে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। তবে আমরা অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।”
আগের সংবাদ
খাগড়াছড়িতে ছাল তুলে ফেলায় মরছে গাছ, অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের দিকে