“বাংলাদেশে যত অন্যায়ভাবে, যত মানুষকে খুন করা হয়েছে আমরা তার প্রত্যেকটির বিচার চাই।”
Published : 24 Jan 2025, 09:35 PM
যারা মানুষ খুন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল, তারা যেন আবার ফিরে আসতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে কারা জুলুম অত্যাচার করেছে, কারা তাদের জমিগুলো দখল করেছে, ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে, সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, তাদের ইজ্জতে হাত দিয়েছে। এই দুষ্কৃতিকারীদের তালিকা তৈরি করে জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেওয়া হোক। ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা এসকল অপকর্মে জড়িত ছিল।”
শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে জামায়াতের কুড়িগ্রাম জেলা শাখা আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে জামায়াতের আমির এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, “মানুষ খুন করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল। ফ্যাসিস্টরা যেন পুনরায় ফিরে না আসে এবং আমরা যেন তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেই। বাংলাদেশে যত অন্যায়ভাবে, যত মানুষকে খুন করা হয়েছে আমরা তার প্রত্যেকটির বিচার চাই।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের সমালোচনা করে শফিকুর বলেন, “২৬ লাখ টাকা বাংলাদেশ থেকে চুরি করে নিয়ে গেছে। যদি এটাই তাদের দেশ হতো, তাহলে দেশের টাকা কেউ কি বিদেশে চুরি করে? পাচার করে পাঠায়? এটা ছিল তাদের জমিদারি। এখান থেকে খাজনা আদায় করবে আর দেশের টাকা বিদেশে পাচার করবে।”
“এর আগে আওয়ামী লীগ বলেছিল, তারা ক্ষমতা থেকে সরে গেলে এক দিনেই তাদের পাঁচ লাখ নেতা-কর্মীকে খুন করা হবে। জামায়াত নাকি এই খুন করবে। কিন্তু গত ৫ অগাস্টে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে কোথাও কোনো খুনের ঘটনা ঘটেনি। আওয়ামী লীগ খুনি হতে পারে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ দেশকে ভালোবাসে।”
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সাড়ে ১৫ বছরের দুঃখ-ব্যাথা-বেদনা-কষ্ট আমরা বুকে বহন করে বেড়াচ্ছি। কিন্তু ৫ আগস্ট জাতি যখন মুক্তি পেল-তখন বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে আমাদের সহকর্মীদের আমরা বললাম, শান্ত থাকুন ধৈর্য ধরুন, শৃংঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নিজ নিজ জায়গা থেকে সর্ব্বোচ্চ অবদান রাখুন।
“আমরা যেন কেউ চুরি-চামারি না করি; চাঁদাবাজি না করি। দখল বাণিজ্য না করি, ঘুষের ভাগ না বসাই, মামলা বাণিজ্য না করি।”
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করে শফিকুর রহমান বলেন, “কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বড়াইবাড়ী সীমান্তে বিডিআর ও স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিরোধে ভারতীয় বাহিনীর পরাজয়ের প্রতিশোধ হিসেবে পিলখানার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার বিচার গত ফ্যাসিস্ট সরকার দুর্বল ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে করতে পারেনি।
“এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিটির বিচার হবে। খুনিদের কোনো মাফ নেই। বাংলাদেশে অন্যায়ভাবে যত মানুষকে খুন করা হয়েছে, তার প্রতিটির বিচার চাই।”
কুড়িগ্রাম জেলার পিছিয়ে পরা মানুষের দুর্দশা নিয়ে তিনি বলেন, “এটা একটা সীমান্তিক জেলা। একটা মানুষ অসুস্থ হলে ভালো একটা চিকিৎসা পাবে, তার কোনো ব্যবস্থা নাই। বর্ষা এলে এখানকার নদী পাড়ের মানুষজন পানিতে তলিয়ে যাবার চিন্তায় ঘুমাতে পারে না।
“তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। কিন্তু কার ইঙ্গিতে এটা বন্ধ হয়ে আছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে এটা হয় নাই।”
জেলা শাখার আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিশে সুরা সদস্য মাওলানা আব্দুল মতিন ফারুকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কার্য পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার সালেহীন, অধ্যাপক আজিজুর রহমান স্বপন বক্তব্য রাখেন।