“পরিবারের দাবি, সারাদেশে অন্য লাশ তোলা হলে তারপর তারা সম্মতি দেবেন। ওই অবস্থায় লাশ না তুলেই ফেরত আসা হয়।”
Published : 18 Sep 2024, 08:35 PM
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চলাকালে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গুলিতে নিহত বিপ্লব হাসান ও নূরে আলম সিদ্দিকীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে তুলতে দেয়নি তাদের স্বজনরা।
আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বুধবার বেলা ১১টার দিকে লাশ তুলতে গেলে স্বজনরা আপত্তি জানান। পরে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা লাশ উত্তোলন না করেই ফিরে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০ জুলাই গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের কলতাপাড়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন তরুণ নিহত হন।
তারা হলেন-বিপ্লব হাসান (২০), নূরে আলম সিদ্দিকী ওরফে রাকিব (২০) ও জোবায়ের আহমেদ (২১)।
ময়মনসিংহ গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শহিদুল ইসলাম বলেন, “তদন্তের জন্য নিহত ওই তিনজনের লাশের ময়নাতদন্ত করতে তা উত্তোলন করতে গত মাসে আদেশ দেয় আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে লাশ উত্তোলন করতে গেলেও পরিবারের আপত্তির কারণে তোলা যায়নি।
“পরিবারের দাবি, সারাদেশে অন্য লাশ তোলা হলে তারপর তারা সম্মতি দেবেন। ওই অবস্থায় লাশ না তুলেই ফেরত আসা হয়।”
ওই তিন তরুণ নিহতের ঘটনায় গৌরীপুর থানার এসআই মো. শফিকুল আলম বাদী হয়ে ২২ জুলাই থানায় একটি মামলা করেন। অজ্ঞাত পরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয় ওই মামলায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন একটি মহল অবৈধভাবে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র করে। অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসীদের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র অনুযায়ী বন্দুকধারী চার-পাঁচজন গুলি করে তিন তরুণকে হত্যা করে।
নিহতদের মধ্যে বিপ্লব কলতাপাড়া বাজার এলাকায় চূড়ালি গ্রামে বাসিন্দা ও স্থানীয় তেলের মিলের শ্রমিক, নূরে আলম সিদ্দিকী রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ও মাদ্রাসা শিক্ষক এবং জোবায়ের মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্ব কাউরাট গ্রামের বাসিন্দা ও শম্ভুগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। ঘটনার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ দাফন করেন স্বজনেরা।
এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার পর ডৌহাখলা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম আকন্দ ও একই ইউনিয়নের কৃষকদল নেতা আবুল কাশেম বাদি হয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
মামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে আসামি করা হয়। আদালত থানায় হওয়া মামলার সঙ্গে দুটি মামলা যুক্ত করে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয় বলে গৌরীপুর থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান।
ওসি জাবলেন, “নিহত হওয়ার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই তিনজনের লাশ দাফন করা হয়েছিল। মামলার তদন্তের স্বার্থে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও কে এম রাসফসান রাব্বির নেতৃত্বে পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা আজ বেলা ১১টার দিকে নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে যান। তখন স্বজনরা লাশ তোলায় আপত্তি তোলে।”
বিপ্লব হাসানের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, “ছেলে হত্যায় আমি কোন মামলা করিনি। মামলা করব কিনা সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিইনি। সারাদেশে অনেক হত্যা হয়েছে। সবার লাশ যদি ময়নাতদন্তের জন্য তোলা হয়, তাহলে ছেলের লাশও তুলতে দেব।
“শুধু আমার ছেলের লাশ একা তুলতে দেব না। প্রশাসনের লোকজন এসে তুলতে চাইলেও আমি দেইনি।”
আর নূরে আলম সিদ্দিকীর বাবা আবদুল হালিম বলেন, “আবু সাঈদ সহ সারা দেশে বহু ছাত্র-জনতা হত্যা হয়েছে। সবার লাশ তুললে আমার ছেলে লাশও তুলতে দেব।”