টাকা চুরি করতে গিয়ে দেখে ফেলায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় একে একে মা ও তার দুই সন্তানকে হত্যা করে আসামি পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মাথায় রোববার রাতে আসামিকে গ্রেপ্তারের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) আরিফুর রহমান মণ্ডল এই দাবি করেন।
গ্রেপ্তার তাঁতশ্রমিক আইয়ুব আলী ওরফে সাগর (২৮) পাশের উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতি গ্রামের মৃত মোকছেদ আলীর ছেলে। তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার রওশন আরার (৩০) সৎ মামা হন। তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে।
শনিবার উপজেলার মবুপুর গ্রামের বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে রওশন ও তার দুই ছেলে জিহাদ (১০) ও মাহিনের (৩) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রওশন উল্লাপাড়া উপজেলার কয়রা গ্রামের মৎস্যজীবী সুলতান আলীর তৃতীয় স্ত্রী। এ ঘটনায় রওশনের ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জামাল বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
স্বামী ভরণপোষন না করায় তিন সন্তান নিয়ে রওশন বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামের বাড়িতে থাকতেন। বড় ছেলে রাসেল (১৬) ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করে। রওশন আরা তাঁত মালিকের বাড়িতে সুঁতা গড়ানোর কাজ করে সংসার চালাতেন।
সোমবার জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসপি আরিফুর রহমান মণ্ডল তিন খুনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, তাঁতশ্রমিক আইয়ুব আলী ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনাকারী চারটি সংস্থা থেকে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিন্তু ঋণের কিস্তি তিনি দিতে পারছিলেন না। টাকা ধার চাইতে ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি রওশন আরার বাড়িতে আসেন। কিন্তু আইয়ুব আলী ব্যর্থ হন। ওই সময় রওশনের ঘরে আইয়ুব আলী চারটি ট্রাঙ্ক দেখতে পান। তাতে তার ধারণা হয়, সেখানে টাকা আছে।
এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর আইয়ুব আলী আবার রওশনের বাড়ি যান। তখনও তিনি টাকা নিতে ব্যর্থ হন। পরে রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে রওশনের বাড়িতেই থেকে যান।
গভীর রাতে সবাই ঘুমানোর পর আইয়ুব আলী রওশনের শাড়ির আঁচল থেকে চাবি নিয়ে একে একে ট্রাঙ্ক খোলা শুরু করেন। শব্দে প্রথম রওশন জেগে উঠেন। তখন আইয়ুব আলী শিল দিয়ে রওশনের মাথা ও বুকে আঘাত করে হত্যা করেন। তল্লাশি চালানোর একপর্যায়ে ছোট ছেলে মাহিন জেগে গেলে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। এরপর মেঝছেলে জিহাদ জেগে গেলে তাকে হত্যা করেন আইয়ুব আলী। কিন্তু চারটি ট্রাঙ্ক থেকে তিনি টাকা ও স্বর্ণ কিছুই পাননি।
পুলিশ সুপার বলেন, টাকা ও মূল্যবান কিছু না পেয়ে হতাশ আইয়ুব রাতের বাকিটা সময় রওশনের ঘরেই কাটান। ভোরের দিকে বের হয়ে দরজায় শিকল দিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি এবং স্বাভাবিকভাবেই সব কাজকর্ম করছিলেন। তার ধারণা ছিল, বিষয়টি কেউ টের পাবে না।
তিনি আরও বলেন, আইয়ুব আলীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রওশন আরার বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শিলটি উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: