নাটোরে অন্তঃসত্ত্বার ভাতা কার্ড প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ পরিচালক।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2023, 04:42 PM
Updated : 3 June 2023, 04:42 PM

নাটোরে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের জন্য বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা করিয়ে শতাধিক অন্তঃসত্ত্বার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে।   

এ নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছিল ভুক্তভোগী নারীরা।   

নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগে ওঠে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ‘হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার‘ আলট্রাসনোগ্রামের পাশাপাশি একগাদা পরীক্ষা করিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা।  

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তা।

সদর উপজেলার গাজিপুর বিল এলাকার সন্তানসম্ভবা জরিনা খাতুন বলেন, “কিছুদিন আগে মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের আবেদন করি। এর জন্য কিছু মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হয়। এরপর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা সুইটি রানীর কাছে গেলে তিনি হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। সেখানে আলট্রাসনোগ্রামের পাশাপাশি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই একগাদা পরীক্ষা করে ১৬শ টাকা নেয়।

একই অভিযোগ করেন আটঘরিয়া গ্রামের শাহিদা। তিনি বলেন, বনপাড়ার জাহেদা হাসপাতাল থেকে তিনি আলট্রাসনোগ্রাম করান। সেই প্রতিবেদন নিয়ে সুইটি রানীর কাছে গেলে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার আগের কাগজপত্র চলবে না বলে জানান তিনি। পরে হেলথ কেয়ারে নানা পরীক্ষা করে নেওয়া হয় ২৫শ টাকা।

পুরো ইউনিয়নে ১৩২ জন নারীর সাথে একই ঘটনা ঘটেছে এবং ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানিয়েছেন তারা।

নাটোর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. পরিতোষ কুমার রায় বলেন, “একজন নারী সন্তানসম্ভবা কি না তা জানার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে এতগুলো পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।

“শুধুমাত্র মুত্র পরীক্ষার মাধ্যমেই বিষয়টি জানা যায়। আরেকটু নিশ্চিত হবার জন্য বড়জোড় আলট্রাসনোগ্রাম করা যেতে পারে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষা করারও বিধান নেই।”

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এতোগুলো পরীক্ষা কীভাবে করানো হলো জানতে চাইলে সদুত্তর মেলেনি ‘হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইসমাইল হুসাইনের কাছে।

ডা. ইসমাইল হুসাইন বলেন, “রোগীরা এসে যে যে পরীক্ষা করতে বলেছে আমরা শুধু সেই পরীক্ষাগুলোই করেছি। সুইটি রানী স্বাস্থ্য সেক্টরে একজন সরকারী কর্মকর্তা। এই হিসেবে উনার সাথে আমাদের একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। উনি প্রয়োজন মনে করলে অনেক সময় তার পরিচিত জনকে আমাদের এখানে চিকিৎসার জন্য পাঠান।”

নিজের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মী সুইটি রানী।

তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমি কাউকে হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠাইনি।”

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, “ঘটনাটির সমাধান চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীরা। ঘটনাটি পরিষদের মাসিক সভায় আলোচনা করে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের দেওয়া মেডিকেল প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের আবেদন করা যায়। গরীব অসহায় দুঃস্থ গর্ভবতী নারীদের কাছ থেকে কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সুইটি রানী ন্যক্কারজনক কাজ করেছেন।”

এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি জানান তিনি। 

জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোসা. মাহফুজা খানম জানান, বিষয়টি জেলা প্রশাসনের মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ক্লিনিক্যাল কনট্রাসেপসনের সহকারী পরিচালক আব্দুর রউফ মল্লিককে আহ্বায়ক এবং সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান খানকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আব্দুর রউফ মল্লিক বলেন, “গত বৃহস্পতিবার থেকে কমিটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। তারই অংশ হিসেবে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালুর উপস্থিতিতে তার কার্যালয়ে ৫ ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের সাক্ষাৎকার লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

“তারপর তদন্ত কমিটি সুইটি রানীরও জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী ১৩ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।”