জেলা পুলিশ সুপার বলেছেন, নিরপরাধ কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে।
Published : 23 Sep 2024, 12:18 AM
বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও নিহতের ঘটনায় ১৮ সাংবাদিকের নামে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া আরও এক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর দায়ের করা এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের পরিবারও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
যদিও বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা সাংবাদিকদের বলেছেন, “এসব মামলা তদন্ত করে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরপরাধ কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই ব্যাপারে নজর রাখা হচ্ছে।”
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সদর থানায় হামলা ও লুটপাটের সময় গুলিতে দুজন নিহত হন। ওই ঘটনায় দুটি হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।
তারা হলেন- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহসভাপতি ও বগুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল আলম নয়ন, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য ও বাসসের জেলা প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ এইচ এম আখতারুজ্জামান, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি জে এম রউফ এবং ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান হাসিবুর রহমান বিলু।
এ ছাড়া বগুড়া প্রেসক্লাবের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক জিয়া শাহীনের বিরুদ্ধে রাজশাহী সাইবার ট্রাইবুনালে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি দিয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিনের বগুড়া প্রতিনিধি ইমরান হোসেন লিখন। তবে অভিযোগটির এখনও শুনানি হয়নি।
এ ছাড়া সারিয়াকান্দী উপজেলায় একজন, আদমদিঘীতে চারজন, নন্দীগ্রামে একজন, শিবগঞ্জে চারজন, সোনাতলায় তিনজন সাংবাদিক বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়েছেন।
মামলার বরাতে জানা যায়, ৪ অগাস্ট বগুড়া শহরের ঝাউতলা এলাকা থেকে সদর থানায় হামলা হয়। থানা ভাঙচুরের পর আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য মালামাল লুট এবং আগুন দেওয়া হয়। এ সময় গুলিতে বগুড়া শহরের দক্ষিণ বৃন্দাবনপাড়ার বাসিন্দা দর্জি শ্রমিক শিমুল সরদার নিহত হন। এ ঘটনায় ২৭ অগাস্ট নিহতের স্ত্রী শিমু বেগম মামলা করেন।
সদর থানায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বগুড়া শহরের ঝাউতলা এলাকায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে এবং সাবেক সংসদ সদস্য মজিবর রহমান মজনু ও রাগেবুল আহসান রিপুসহ চারজনের নেতৃত্বে অন্য আসামিরা পিস্তল, কাটা রাইফেল, আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ‘ছাত্র-জনতার’ মিছিলে হামলা চালায়। তিন সাংবাদিকসহ এজাহারভুক্ত ৩৩ জন ককটেল ও পেট্রলবোমা হামলা করেন। এ সময় অন্য আসামিদের গুলিতে শিমুল সরদার নিহত হন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও তিন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু, মাহমুদুল আলম নয়ন এবং জে এম রউফসহ ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
একই দিন একই স্থানে রিপন ফকির নামে আরেকজন গুলিতে নিহত হন। ১৭ সেপ্টেম্বর নিহতের স্ত্রী মাবিয়া বেগম মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, ওবায়দুল কাদের, বাসসের জেলা প্রতিনিধি এ এইচ এম আখতারুজ্জামানসহ ১০৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় চার সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।
দুটি মামলাতেই সদর থানার সাবেক ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ আসামি হয়েছেন।
মামলার বিষয়ে জনকণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল আলম নয়ন বলেন, “সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে স্বাধীন সাংবাদিকতার দরজা বন্ধ করা হচ্ছে। হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা কোথাও গ্রহণযোগ্য হবে না। এর আগে কখনও বগুড়ায় এত সাংবাদিকদের ওপর মামলা হয়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলকে ভাবতে হবে।”
বাসস বগুড়ার প্রতিনিধি আখতারুজ্জামান বলেন, “আসলে প্রেসক্লাব কুক্ষিগত করতেই ভিন্ন মতের সাংবাদিকদের গুটি কয়েকজনের প্ররোচণায় মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক মামলা করতে বাদীকে উৎসাহিত করেছে।”
সারিয়াকান্দী উপজেলার আলোকিত প্রতিদিনের প্রতিনিধি মাইনুল বলেন, “কিছুই জানলাম না অথচ আমার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের মামলা দেওয়া হল। এখন গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছি।”
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, “কেউ ফৌজদারি অপরাধ কেউ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে। যদি কেউ এ ধরনের অপরাধ না করে থাকে তাকে হয়রানি করা যাবে না। বগুড়ার সাংবাদিকরা যদি এ ধরনের অপরাধ না করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা এবং হয়রানির প্রতিবাদ করে নিন্দা জানাচ্ছি।”