“পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। সে সময় দুই ইউপি মেম্বরসহ ছয় পুলিশ সদস্য এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যায়।”
Published : 28 Oct 2024, 05:44 PM
কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে দুই পুলিশ সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন; যারা অবৈধভাবে মাছ শিকার করা জেলেদের কাছে ‘মাছ লুট করতে গিয়ে’ হামলার শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ এসেছে।
এ ঘটনায় আরেক পুলিশ এবং দুই ইউপি সদস্যও আহত হয়েছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বলেছে, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে’ এ ঘটনা ঘটেছে।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার ভোররাতে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের বেড় কালোয়া মোড়ের শ্রীখোল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিখোঁজরা হলেন- কুমারখালী থানার এএসআই সদরুল হাসান (৪০) ও মুকুল হোসেন (৪০)।
আহতরা হলেন- একই থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ছলিম ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটন।
জেলেদের ভাষ্য, গভীর রাতে দুই ইউপি সদস্য ও ছয় পুলিশ পদ্মা নদীর বেড় কালোয়া এলাকায় নেমে অভিযানের কথা বলে কয়েকজন জেলের কাছ থেকে ‘জোর করে’ ইলিশ মাছ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিলাইদহের শ্রীখোল এলাকায় জেলেরা পুলিশ ও ইউপি সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে স্থানীয় অন্য জেলেরা গিয়ে এসআই নজরুলসহ চার পুলিশ ও দুই ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করেন। তবে তাদের সঙ্গে থাকা দুই এএসআইকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে। তখন দুই এএসআই নিখোঁজ হন। বাকি চারজন সাঁতরে তীরে আসতে সক্ষম হয়েছেন।
বেড় কালোয়া মোড়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা ইবাদত শেখের ছেলে এজাহার শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, “রাতে পদ্মায় ইলিশ ধরছিলাম। তখন ছলিম ও টিটন মেম্বারসহ ছয় পুলিশ সদস্য এসে আমার কাছে থাকা মাছ নিয়ে চলে যান।”
বেড় কালোয়া এলাকার জেলেদের নেতা ইয়ারুল ইসলাম বলেন, “রাত আনুমানিক ৩টার দিকে স্থানীয় জেলেরা প্রথমে আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, নদীতে ঝামেলা হচ্ছে। ছলিম ও টিটন মেম্বার এবং পুলিশ এসে জেলেদের কাছ থেকে তেল ও মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এই খবর শুনে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি।
“এরপর ভোর ৫টার দিকে কুমারখালী থানার এএসআই সবদুল আমাকে ফোন করে বলেন যে, ভাই আমরা বিপদে আছি, সাহায্য করেন। এর ১০ মিনিট পরে সবদুলকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তখন একটি নৌকায় চারজন গিয়ে নদীর মধ্য থেকে এসআই নজরুলসহ তিন পুলিশ এবং দুই মেম্বারকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এ সময় এসআই নজরুলের মাথা ফাঁটা ছিল, রক্ত বের হচ্ছিল।”
এই জেলে নেতার দাবি, “নদীতে যাওয়া পুলিশদের কোনো পোশাক ছিল না বলে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কারণ, টিটন ও ছলিম মেম্বার জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতেই সঙ্গে করে পুলিশ নিয়ে এসেছিল। ফলে ৩০-৪০ জন জেলে তাদের ডাকাত ভেবে এই হামলা চালিয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটনের মোবাইল ফোনে কলা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, অভিযোগ অস্বীকার করে কুমারখালী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, “গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে গিয়ে দুই নৌকার সংঘর্ষে দুই এএসআই নিখোঁজ হয়েছেন। বাকি চারজন সাঁতরে কূলে আসতে সক্ষম হন। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। পরে বিস্তারিত বলা যাবে।”
জেলেদের অভিযোগের বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, “নিখোঁজ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের অভিযান চলছে। এগুলো তদন্তের বিষয়; তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা যাবে।”