“ঘটনার রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেই এবং মেডিকেল পরীক্ষা করতে বলি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও কথা শোনেননি”, অভিযোগ ভুক্তভোগীর স্বামীর।
Published : 26 Feb 2025, 08:03 PM
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্বামীকে আটকে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ ও সেই ভিডিও দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে কলেজছাত্রী স্ত্রীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার আট দিন পর মামলা নিয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার রাতে মামলার পর বুধবার দুপুরে ওই ছাত্রীকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীর পোশাক শ্রমিক স্বামী।
তবে থানায় মামলা কিংবা মেডিকেল পরীক্ষায় দেরি হওয়া নিয়ে কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
ভুক্তভোগীর স্বামীর অভিযোগ, ঘটনার পরপর থানায় গেলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। বরং ঘণ্টার পর ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশের গাফিলতির কারণে এ ঘটনায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ফতুল্লা থানার একটি এলাকায় ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। মঙ্গলবার রাতে দুইজনের আসামি করা হয়েছে। আসামিরা ওই নারীর ভাড়াটে বাসার মালিকের ছেলে ও তার বন্ধু।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে প্রেমের সম্পর্কের পর পরিবারের অমতে বিয়ে করেন ভুক্তভোগী নারী। বিয়ের পর ফতুল্লাতে স্বামী ও স্ত্রী আলাদা বাসায় থাকতেন।
“১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই নারীর বাসায় তার স্বামী দেখা করতে গেলে তাকে (স্বামী) বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে যান কয়েকজন যুবক। পরে তার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে মারধর করে ভিডিও ধারণ করা হয়। এ ভিডিও দেখিয়ে স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়।”
ভুক্তভোগী নারী নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং স্থানীয় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার স্বামী অপর একটি পোশাক কারখানার কর্মী।
মোবাইল ফোনে ওই নারীর স্বামী বলেন, “ঘটনার রাতে আমার স্ত্রী অসুস্থবোধ করায় ওষুধ নিয়ে তার ভাড়া বাসায় যাই। ওষুধ দিয়ে বের হওয়ার পর বাড়ির মালিকের ছেলে ও তার বন্ধুরা আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে মারতে মারতে দূরে একটি ফাঁকা স্থানে নিয়ে আটকে রাখে।
“এক পর্যায়ে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সেই ভিডিও দেখিয়ে আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন তারা। পরে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে এক বন্ধুর কাছে গিয়ে তার মোবাইল থেকে জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ কল করি। সেখান থেকে স্ত্রীর কাছে গিয়ে তাকে বাসায় অচেতন অবস্থায় পাই। পরে টহল পুলিশ এলে স্ত্রীকে নিয়ে থানায় যাই।”
তিনি বলেন, “ঘটনার রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দেই এবং মেডিকেল পরীক্ষা করতে বলি। কিন্তু পুলিশ আমাদের কোনও কথা শোনেননি। থানায় ওসি নেই জানিয়ে পুলিশ কোনও আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি ওসিকে ডেকে আনার ব্যবস্থাও করেননি।”
পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মীমাংসা করে নেওয়ার পরামর্শ আসে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বামী।
ধর্ষণের ঘটনাটি তাদের দুই পরিবারের কাউকে এখনো জানানো হয়নি বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “আমাদের মারধর ও জিম্মি করে রাখার বিষয়টি বলেছি কিন্তু ধর্ষণের কথা তাদের জানাতে পারিনি। কোন সাহসে জানাব বলেন? আমার স্ত্রী ধর্ষণ হইছে কিন্তু পুলিশ উল্টো আমাদের হয়রানি করেছে। আমরা তো ভরসাই পাচ্ছি না।”
পুলিশের গাফিলতি ও হয়রানির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ঘটনার রাত ও পরদিন সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত থানায় ছিলেন তিনি। পরে মঙ্গলবার দুপুরে আবার তাদের ডাকা হয়। বুধবার বিকাল পর্যন্ত তারা থানাতেই ছিলেন।
“দুপুরে মেডিকেল পরীক্ষা করাইছে। আমরা তো কিছুটা হলেও জানি। এতদিন পর পরীক্ষাতে তো (ধর্ষণের আলামত) কোনও কিছুই পাওয়া যাবে না। অথচ আমি ঘটনার রাতেই বারবার পুলিশকে মামলা না নিক অন্তত মেডিকেল পরীক্ষা করানোর জন্য অনুরোধ করেছিলাম”, বলেন এই পোশাক শ্রমিক।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি শরীফুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তিনি তা কেটে দেন। এক পর্যায়ে খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।
তবে পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, “গতরাতে একটি ধর্ষণ মামলার কথা আমাকে জানানো হয়েছে। তবে মামলা নিতে বা মেডিকেল পরীক্ষা করাতে দেরি করেছে পুলিশ, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। যদি এমনটা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”