আলোচনা সভার পাশাপাশি ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
Published : 21 Dec 2024, 12:06 AM
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্ত্বার জন্য কাজ করতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সন্তু।
শহরতলীর রাঙ্গাপানি এলাকায় শুক্রবার ‘মোনঘর’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
রাঙামাটি শহরতলীর রাঙ্গাপানি এলাকায় চার একর জমিতে কয়েকজন বৌদ্ধভিক্ষুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা হয় মোনঘর শিশু সদন।
পরে এখানে স্কুল, হাসপাতালসহ নানা কার্যক্রম যুক্ত হয় ধীরে ধীরে। এবার প্রতিষ্ঠানটির ৫০ বছর উপলক্ষে সূবর্ণ জয়ন্তীর দুই দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে গড়ে তোলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মোনঘর’র সূবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে সাড়ম্ভরে।
অনুষ্ঠানটি রূপ নেয় নবীন-প্রবীণ ও সাবেক বর্তমান শিক্ষার্থীদের এক মিলন মেলায়।
বিদ্যালয় ও শিশু সদন নিয়ে গঠিত পাহাড়ে নানা ভাষাভাষি ১৩টি জনগোষ্ঠির শিক্ষার প্রসারে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনকারী এই প্রতিষ্ঠানে সূবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ছিলেন রাঙামাটির চাকমা সার্কেলের চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, খাগড়াছড়ির মং সার্কেল চিফ সাচিং প্রু চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পারটাজ, মোনঘরের সভাপতি ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ শ্রাদ্ধালংকর মহাথের।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মোনঘর কার্যনির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি গৈরিকা চাকমা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ৫০ বছরে প্রতিষ্ঠানটি পাহাড়ে অন্যতম বিদ্যাপিঠে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের পিছিয়ে থাকা হতদরিদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের আলোকিত করেছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন বক্তারা।
বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেন, “এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পার্বত্য আঞ্চলের বুকে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যারা মনোঘর প্রতিষ্ঠা করেছেন তাদের স্মরণে রাখতে হবে। যারা এখনো নিরলসভাবে চেষ্টা করছেন, এই পর্যন্ত নিয়ে আসার জন্য তাদের সবার কৃতজ্ঞতা জানাই।”
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “শুধু প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিলে হবে না, নিজেদের আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নিজস্ব জাতিসত্ত্বার জন্য কাজ করতে হবে।”
সন্তু লারমা বলেন, “আজকে পাহাড়ের বুকে নিরাপত্তাহীনভাবে বসবাস করতে হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের ১৩টি সহ মোট ১৪টি ভাষাভাষির মানুষ বসবাস করছে। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে তা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য এই মনোঘরের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে। পার্বত্য চুক্তি দীর্ঘ দিনেও বাস্তাবায়ন না হওয়ায় আজকে পাহাড়ের মানুষ বদ্ধ পরিবেশে জীবনযাপন করছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
আলোচনা সভার পাশাপাশি ছিল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।
চাকমা ভাষায় ‘মোন’ এর বাংলা হল পাহাড়। সাধারণভাবে পাহাড়ের উপর ঘরকেই ‘মোনঘর’ বলা হয়।