এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলা।
Published : 16 Sep 2024, 09:00 PM
খুলনায় তিন দিন ধরে টানা বর্ষণে ৬০ ভাগ মাছের ঘের ভেসে গেছে; ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমন ও সবজি চাষিরাও।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জেলার কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলা।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, “টানা বৃষ্টিতে খুলনার নয় উপজেলার ৬০ শতাংশের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে।”
ডুমুরিয়ার আড়ংঘাটা থানাধীন তেলিগাতী গ্রামের বিল ডাকাতিয়ার মাছচাষি মো. আকবর শেখ বলেন, “গলদা চিংড়িসহ ঘেরের সব মাছ পানিতে ভাসায় নিয়ে গেছে। অনেক টাকা খরচ করিছি। এখন এই যে ক্ষতি, কীভাবে পোষাব জানিনে? কী যে করব? বুঝে উঠতে পারতিছিনে!”
তার ভাষ্য, “গত বছরও আমার অনেক মাছ চলে গেছে। এই বছরও সেই একই অবস্থা। প্রত্যেকটা ঘেরের এমনই অবস্থা। সব ঘের তলায় গেছে। বিলের পানি সরানোর কোনো ব্যবস্থা নাই। আমরা এখন খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছি।”
গত তিন দিনের ভারি বর্ষণে নিজের ঘেরের কয়েক লাখ টাকার গলদা চিংড়ি পানিতে ভেসে যাওয়ায় দাবি করেন তিনি।
শুধু আকবর শেখ নন, কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতী মৌজার সহস্রাধিক চাষির ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে কয়েক কোটি টাকার গলদা ও সাদা চিংড়ি।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় সোমবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টাতেই খুলনায় মোট বৃষ্টি হয়েছে ১৫৪ মিলিমিটার। আর টানা তিন দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩২৬ মিলিমিটার।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলায় ৮৫ হাজার ৬০০ হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর পাঁচ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা আগাম শীতকালীন সবজিসহ অন্য ফসলের মধ্যে দুই হাজার ৩২৫ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, “গত এক দশকে খুলনা অঞ্চলে মাছের ঘেরের আইলে সবজি চাষ ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। বছরব্যাপী এখানে সবজি উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে, আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন এখানকার কৃষক। এবার বৃষ্টিতে এসব সবজি গাছের গোড়া ডুবে গেছে; দমকা বাতাসে অনেক গাছের মাচা ভেঙে গেছে।
ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, “খুলনার ডুমুরিয়াকে বলা হয় সবজির ভাণ্ডার। বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মত সবজি বিক্রি হয় এখান থেকে। এই বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি এবং খরিপ-২ মৌসুমের ফসলের খুব ক্ষতি হয়েছে।”
ইবনে আমিন বলেন, “চলতি বছর ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী, আর্টলিয়া, সরাপপুর, ভাণ্ডারপাড়াসহ ১৪ ইউনিয়নে অসময়ের তরমুজ চাষ হয়েছে। প্রায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২০০ কৃষক মাচান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। এই বৃষ্টিতে তাদের অনেকেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।”
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন, “কয়রায় টানা বর্ষণে প্রায় ৭০০ মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। এতে উদ্বিগ্ন এবং হতাশ হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মাছ চাষিরা।”
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, “নয় উপজেলার ৬০ শতাংশের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে।
“বিশেষ করে চিংড়ি ঘেরগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন মাছ তোলার সময়। এ সময়ে ঘের ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিরা খুবই লোকসানের মুখে পড়বেন।”
মৎস্য চাষিদের টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।