শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায় এ ঘটনার পর শনিবার শেষ বিকালে পরিদর্শনে গিয়ে মাশরাফি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের নিরাপত্তার জন্য সব রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এর আগে ফেইসবুকে এক পোস্টে এ ঘটনায় মর্মামত মাফরাফি আক্ষেপ করে বলেন, “ছেলেবেলা থেকে যে নড়াইলকে দেখে এসেছি, যে নড়াইলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে আমি মেলাতে পারছি না।”
এদিন বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাহাপাড়ায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, “মূল কথা হচ্ছে, আমরা এখানে দেখে গেলাম, এখানে যারা ভুক্তভোগী তাদের সাহসটা ফিরিয়ে আনা।”
নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানে পুলিশ সবসময় থাকবে। পুলিশ সবসময় থাকতাছে।”
উপস্থিত জনতার উদ্দেশে এ সময় ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য বলেন, “আপনারা যতক্ষণ সহযোগিতার হাত না বাড়াবেন, ততক্ষণ কেউ কিছু করতে পারবে না। আপনাদের সহযোগিতার হাতটা খুব জরুরি।”
স্থানীয়রা জানান, আকাশ সাহা নামে এক কলেজ ছাত্রের ফেইসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে দীঘলিয়ায় শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।
বিকালে উত্তেজনা আরও বাড়ে এবং সন্ধ্যায় তারা সাহাপাড়ার কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করে। পরে টিনের কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ জানায়, যার ফেইসবুক আইডির পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা অশোক সাহাকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
নিজের নির্বাচনী এলাকায় এ ধরনের ঘটনায় মর্মাহত মাশরাফি বিন মুর্তজা সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, “গতকাল আমাদের এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে এবং প্রতিটি মুহূর্তে পোড়াচ্ছে।
পরে বিকালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। এ সময় সেখানে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মাশরাফি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরে গিয়ে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সান্ত্বনা দেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। এ সময় স্থানীয় লোকজনও সেখানে জড়ো হন।
পরে সাড়ে ৬টার দিকে মাশরাফি সাহাপাড়ায় সমবেত জনতার উদ্দেশে বলেন, “আজকে এখানে যত মানুষ আছে, কালকে যদি এখানে এত মানুষ থাকতেন তাহলে এই ঘটনাটা ঘটত না। আজকে সবাই ক্যামেরা, মোবাইল নিয়ে চলে আসছেন, কিন্তু কালকে যদি থাকতেন তাহলে এটা হতো না।”
“আপনাদেরই প্রতিবেশীদের বাড়িঘর এভাবে ভেঙে রেখে গেছে। আপনাদেরই উচিত ছিল এখানে আটকানো। যে অন্যায় করেছে তার বিচার আমরা চাই।”
তিনি বলেন, “আজ পর্যন্ত নড়াইলে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এটা প্রথম। দীঘলিয়ার আশপাশে আপনারা যারা আছেন, তাদের লজ্জা হওয়া উচিত; কারণ, নড়াইলে এই ধরনের গ্যাঞ্জাম শুরু হইছে আপনাদের এখান থেকে। আজ পর্যন্ত নড়াইলে এমনটা হয়নি। এটা কারোর কাঙ্ক্ষিত না, কেউ এটা চায় না।
“একবার একটু ভেবে দেখুন, আপনার পরিবারের কাউকে যদি এভাবে আঘাত করা হয় তাহলে আপনার কেমন লাগবে।”
“যাই হোক, এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। এটা শুধু এখানে না, যেকোনো জায়গায় ঘটতে পারে। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা পাশে এসে দাঁড়ায়েন। আপনারা সামজিকভাবে পাশে এসে না দাঁড়ালে আমরা সমাধান করতে পারব না।”
এর আগে গত ১৭ জুন এ জেলার মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের এক ছাত্রের ভারতের বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত এক বক্তব্য নিয়ে ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পর ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়।
এ নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের মধ্যে এ ঘটনায় সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যেই লোহাগড়ার সাহাপাড়ায় অগ্নিসংযোগে ঘটনা ঘটল, যা নিয়েও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
নতুন করে আর কোনো সমস্যা না হওয়ার আশায় আছেন ওই এলাকাবার মানুষ।
হামলায় আহত শিক্ষক তরুণ কুমার সাহা বলেন, শুক্রবার বিকেল থেকে তারা এলাকায় ছিলেন।
“সন্ধ্যার ঠিক পরে হঠাৎ করে কিছুসংখ্যক লোক আমাদের বাড়ির পাশের মন্দিরের হামলা চালায়। তারা আমার ভাই কুমারেশ সাহাকে মারতে থাকে। আমি তাদের থামানোর চেষ্টা করে বলি, ওকে মারছ কেন? আমাদের অপরাধ কী?’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন আমার ওপর হামলা করে। পিটিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমি তো কাউকে চিনি নাই।
”আকাশ সাহা যদি সত্যি সত্যি আপরাধ করে থাকে থাকলে অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত। আমাদের এমপি মাশরাফি এসেছিলেন। তিনি আমাদের সাহস দিয়েছেন। সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করছি নতুন করে আর কোনো ঘটনা ঘটবে না।”
এলাকা পরিদর্শন শেষে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নিজামউদ্দিন খান নিলু বলেন, “নড়াইলের মাটিতে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। সুষ্ঠু তদন্ত করে সকল ঘটনার বিচার করা হবে।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাজ করছে বলে নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
আরও পড়ুন: