ফেনীতে হাসপাতালের পথে অটোরিকশাতেই নবজাতকের জন্ম

ফেনী সদর উপজেলার দুই হাসপাতাল ঘুরে জেলা শহরের ক্লিনিকে যাওয়ার পথে অটোরিকশাতেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন এক প্রসূতি।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2022, 05:42 AM
Updated : 7 July 2022, 05:42 AM

কোহিনূর বেগম নামের ওই নারী ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের আবুল বাশরের স্ত্রী। ওই অটোরিকশায় করে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে বুধবার তাকে নিয়ে জেলা শহরের ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিকে যাচ্ছিলেন স্বজনরা।

কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই শহরের শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের পুলিশ ফাঁড়ির কাছে অটোরিকশায় তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।ওই এলাকার স্কয়ার ল্যাব ডক্টরস চেম্বার অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তিনজন নার্স তাকে তাৎক্ষণিক সেবা দেন।

ওই চিকিৎসা কেন্দ্রের সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্পণা পাল জানান, প্রসবের পর মা ও নবজাতককে ওই অটোরিকশায় করেই ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডা. তাহমিনা নাহিদ জুঁই বলেন, “আমাদের ক্লিনিকে আসার আগে পথেই উনি সন্তান প্রসব করেছেন। বর্তমানে মা ও বাচ্চা দুজনই ভালো আছে।“

প্রসূতির সঙ্গে থাকা এক আত্মীয় জানান, দুপুরের দিকে কোহিনূরের প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে গ্রামের বাড়ি থেকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালের পরিবেশ ‘ভালো না লাগায়’ ওই দুই জায়গায় ভর্তি না করে কোহিনূরকে শহরের ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর বিকালে স্বজনরা কোহিনূরকে নিয়ে শহীদুল্লা কায়সার সড়কে ওয়ান স্টোপস মেটারনিটি ক্লিনিকের পথে রওনা হন।

কিন্তু পুলিশ ফাঁড়ির কাছাকাছি পৌঁছে রোগীর অবস্থা ‘খারাপ হলে’ স্বজনরা ওই এলাকার স্কয়ার ল্যাবে গিয়ে খবর দেন। তখন ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ সিনিয়র স্টাফ নার্স অর্পণা পাল, ফাতেমা আক্তার শিল্পী এবং ঋতু রানি ঘোষকে ওই অটোরিকশার কাছে পাঠায়।

অর্পণা পাল বলেন, “সেখানে গিয়ে দেখি রোগীকে দূরে কোথাও হাসপাতালে নেওয়ার মত অবস্থা নেই। তারপর অটোরিকশার পর্দা দিয়ে ঢেকে রোগীর প্রসবের ব্যবস্থা করা হয়। উনার ছেলে হয়েছে।“

সিনিয়র স্টাফ নার্স ফাতেমা আক্তার শিল্পী বলেন, এভাবে রাস্তার মধ্যে অটোরিকশায় কারও সন্তান প্রসব করনোর অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে ‘প্রথম’।

ধলিয়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে কোহিনূরদের বাড়ি থেকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। সেখান থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ২২ কিলোমিটার দূরে। আর ওই হাসপাতাল থেকে শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের পুলিশ ফাঁড়ির দূরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি।

শুরু থেকেই প্রায় ৩৬ কিলোটিমটার রাস্তা কোহিনূরকে অটোরিকশা করেই নেওয়া হয় বলে জানান স্বজনরা। তাদের ভাষ্য, রাস্তা ‘ভালো’ হওয়ায় কোহিনূরের কোনো শারীরিক সমস্যা ‘হয়নি’।