ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সহজ যোগাযোগ মাধ্যম হলো বেনাপোল বন্দর। ফলে এই বন্দর ব্যবহারে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি বন্দরে।
বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা করছে, ২৫ জুন যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দিলে বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে, তাতে আমদানি-রপ্তানিও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, ৫৯ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন দুই লাখ মেট্রিক টন মালামাল ওঠানো ও নামানো হয়।
বেনাপোল বন্দরে ক্রেন ও ফর্কলিফট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান 'ব্ল্যাক বেঙ্গল এন্টারপ্রাইজের’ ব্যবস্থাপক মিল্টন খন্দকার বলেন, মালামাল ওঠানামায় বন্দরে তাদের ছয়টি ক্রেনের মধ্যে সচল আছে তিনটি। খুব দ্রুত আরও দুটি ক্রেন আনা হবে।
সেতু চালু হলে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে গতি ফিরে আসবে বা এর ফলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বন্দর কর্তৃপক্ষের এ ধরনের ধারণাকে মানতে নারাজ সিঅ্যান্ডএফ সভাপতি।
তিনি বলেন, " প্রতিদিন যেখানে ৫শ থেকে সাড়ে ৫শ পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে বন্দরে ঢোকার কথা, সেখানে জায়গা সংকটের কারণে ঢুকছে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ ট্রাক। ফলে ভারত থেকে আসা ট্রাকগুলো পণ্য খালাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে ৮ থেকে ১০ দিন।"
এই বাস্তবতায় স্থলবন্দরটিতে পণ্য রাখতে কমপক্ষে ৩০টি শেড, হেভি স্টক ইয়ার্ড এবং কোল্ড স্টোর নির্মাণ জরুরি বলে মনে করেছেন সিঅ্যান্ডএফ সভাপতি শামছুর রহমান।
"আমরা বারবার বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য চিঠি দিলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কর্ণপাত করছেন না," অভিযোগ করেন শামছুর রহমান।
এছাড়া বেনাপোল কাস্টমসে 'অন্য' সমস্যা আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃক নতুন নতুন আইন তৈরিকরণ, ডাটাসিট বা পূর্বমূল্য না মানা ও পণ্য পরীক্ষণে জটিলতার কারণে একটি পণ্য বন্দর থেকে খালাস নিতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে।"
এছাড়া ভারতের বনগাঁ কালীতলায় 'পার্কিং জটিলতা' আছে বলেও জানান সিঅ্যান্ডএফ সভাপতি শামছুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশটির সরকারি ওই পার্কিংয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় বাংলাদেশ থেকে পণ্যবাহী ট্রাকের সময় লাগে ১৫ দিন থেকে কখনও কখনও দেড় মাসের মত।
বেনাপোল কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদ্য সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক মশিয়ার রহমান জানান, স্থলবন্দরের ৩৪টি গুদাম ও আটটি ইয়ার্ড, দুটি ট্রাক টার্মিনাল ও একটি রপ্তানি টার্মিনাল আছে।
প্রয়োজনের তুলনায় এসব অপ্রতুল জানিয়ে এই আইনি কমকর্তা বলেন, "কোথাও কোনো জায়গা খালি নেই। তীব্র পণ্যজট চলছে। বর্তমানে বন্দরের গুদামের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পণ্য আমদানি হচ্ছে। "
পদ্মা সেতুর সুফল পেতে জরুরিভাবে পণ্যাগার, শেড ও ইয়ার্ড নির্মাণ প্রয়োজন বলে জানান মশিয়ার রহমান।
পণ্যজট কমাতে ইতোমধ্যে কিছু জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের উপপরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল জলিল।
তিনি বলেন, অবকাঠামো আরও বাড়াতে বেনাপোল বাইপাস সড়কের পাশের ছোট আঁচড়া গ্রামে ১০০ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বন্দর এলাকার আমদানি-রপ্তানি ফটকের পাশে ২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও ১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে।
অধিগ্রহণ করা জায়গায় শিগগির ইয়ার্ড নির্মাণের কাজ শুরুর কথা জানান বন্দরের এই কর্মকর্তা। এতে করে বন্দরের পণ্যজটের সংকট অনেকটা কেটে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
"বেনাপোল দেশের সর্ববৃহৎ বন্দর হওয়া সত্ত্বেও এখানে ভারী পণ্য ওঠা-নামার জন্য পর্যাপ্ত ক্রেন ও ফর্কলিফট (বন্দরের ভিতরে পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহনের জন্য চার চাকার ছোট গাড়ি বিশেষ) নেই। যেগুলো আছে তার মধ্যে কয়েকটা পণ্য খালাস করতে গিয়ে বার বার নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ক্রেন ও ফর্কলিফট চালকরাও অদক্ষ।"
এতে বন্দরে আমদানি করা ভারী পণ্য খালাসে সময় বেশি লেগে যাচ্ছে জানিয়ে বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এসব কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পদ্মা সেতুর সুফল পেতে আগে 'বন্দর উন্নয়ন' প্রয়োজন।
মামুন কবির জানান, এতদিন পদ্মা পার হতে ফেরি ঘাটে (শিমুলিয়া-বাংলাবাজার বা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া) পরিবহনগুলোর যানজট এড়ানোর কোনো উপায় ছিল না। আর্থিক ক্ষতির ভয়ে অনেক আমদানিকারকও পণ্যাগার থেকে পণ্য খালাস নিতেন না। এখন পদ্মা সেতু খুলে দিয়ে প্রতিদিন যেমন পণ্যাগার থেকে পণ্য বেরিয়ে যাবে তেমনি আমদানি করা নতুন পণ্য সেখানে রাখার ব্যবস্থা করা যাবে বলেও মনে করেন তিনি।