প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের

ফেনীতে অনিয়ম-দুর্নীতি ও সহায়ক বই বাধ্যতামূলক করার অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2022, 02:56 PM
Updated : 2 April 2022, 02:56 PM

ট্রাংক রোডের ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুল প্রাঙ্গণ থেকে শনিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ করে। এ সময় ট্রাংক রোড জিরো পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে তারা।

এর আগে বৃহস্পতিবারও একই কর্মসূচি পালনের পর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় শিক্ষার্থীরা। রোববার আবার সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

ফেনী সেন্ট্রাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।

একাধিক শিক্ষার্থী বলে, চলতি বছরের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সহায়ক বই সিলেবাসে বাধ্যতামূলক করেছেন প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে ২০ টাকা মূল্যে যে সিলেবাস বই কিনছে তাতেও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সহায়ক বই।

সিলেবাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ষষ্ঠ হতে নবম শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজির দুটি করে মোট আটটি সহায়ক বই বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব বই কিনতে শিক্ষার্থীদের ৭৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা গুনতে হয়েছে।

তাছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষে সিলেবাসের প্রচ্ছদে স্কুলের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯১৯ সালের পরিবর্তে ১৯৯৯ সাল ছাপানো হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেন, করোনাভাইরাসের সময়েও স্কুলের নিয়মিত বেতন দিতে হয়েছে। তাছাড়া উন্নয়ন ফি, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অ্যাসাইনমেন্ট ফি, নিয়মিত পরীক্ষার ফি নেওয়া হয়েছে।

স্কুলের দুইজন শিক্ষক জানান, সহায়ক বইগুলো বাধ্যতামূলক করার জন্য প্রধান শিক্ষক মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করেছেন। বিনামূল্যের সিলেবাস শিক্ষার্থীরা কিনেছে ২০ টাকায়।

তবে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “এরইমধ্যে সিলেবাসের বইগুলো প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছি। সহায়ক বইগুলোও কেনা লাগছে না।”

এ ছাড়া দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

এদিকে সহায়ক বই বাতিলের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের; নিয়মিত ক্লাসে সিলেবাসের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী এখনও শিক্ষকরা পাঠদান করছেন বলে জানায় তারা।

সিলেবাসে সহায়ক বইয়ের নাম উল্লেখ করা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর আশরাফুল আলম গীটার।

তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ৩০ মার্চ অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মোশারফ হোসেন ভূঞাকে প্রধান করে আহাদ চৌধুরী, জাফর উল্লাহ, নজরুল ইসলাম ও সাইমুন রহমানকে সদস্য করা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতিতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রোববার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে।

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহ বলেন, ”কোনো নোট বা গাইড তালিকাভুক্ত করা, কিনতে বাধ্য করা আমাদের বিধি পরিপন্থি। এ ধরনের কাজ শুধু স্বল্প মেধা বা জ্ঞানসম্পন্নহীন ব্যক্তিই করতে পারেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (এনসিটিবি) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ”এনসিটিবি আইনে পরিষ্কারভাবে নিষেধাজ্ঞা আছে আমাদের প্রণীত বই ছাড়া অন্য কোনো বই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহায়ক হিসেবে বাধ্যতামূলক করা যাবে না। তা করা হলে আইন ও নীতিমালার লঙ্ঘিত হবে।”