আওয়ামী লীগের দুপক্ষে সংঘর্ষ-ভাঙচুর, বেনাপোল-কলকাতা সড়ক বন্ধ

স্থলবন্দরে শ্রমিক ইউনিয়নের আধিপত্য নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের জেরে বেনাপোল-কলকাতা সড়কে যান চলাচল দীর্ঘসময় বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2022, 11:34 AM
Updated : 28 March 2022, 11:47 AM

সোমবার বেলা ১১টায় বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: ৯২৫) এর কার্যালয়ের দখল  নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে যশোরের নাভারন সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জুয়েল ইমরান জানান।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বন্দরে শ্রমিক সংগঠনের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আহত অবস্থায় দুজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান এএসপি।

বন্দরের শ্রমিক ও স্থানীয়রা জানান, দলীয় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, জেলা পরিষদের সদস্য ও বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়নের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামান অহিদ এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বেনাপোল পৌরসভার কাউন্সিলর রাশেদ আলীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সকালে রাশেদের নেতৃত্বে কিছু বহিরাগত বন্দর এলাকায় প্রবেশ করে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটাতে থাকে বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকরা। এরপর বর্তমান সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা লাঠিসোটা নিয়ে তাদের প্রতিহতের চেষ্টা করে।

দুপক্ষের সংঘর্ষের সময় মালামাল লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বেনাপোল পৌর মেয়রের কার্যালয় ও মার্কেটে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। বন্দরে কর্মরত কাস্টমস কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ট্রান্সপোর্ট কর্মচারী ও পথচারীরা আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি করতে থাকে।

সংঘর্ষের সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকে বেনাপোল-কলকাতা সড়ক। প্রাণভয়ে বন্দর ও আশপাশের দোকানপাট ও  ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নাভারন সার্কেলের এএসপি বলেন, “এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় বন্দর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে কাউন্সিলর রাশেদ আলীকে আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের (রেজি: ৯২৫) সভাপতি রাজু আহম্মেদ বলেন, “রাশেদ আলীর নেতৃত্বে বহিরাগত ৪০-৫০ জনের একটি দল বোমা হামলা চালিয়ে বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের কার্যালয় দখলের চেষ্টা চালায়।

“এ সময় আমাদের শ্রমিকরা বন্দর অভ্যন্তরে পণ্য লোড-আনলোড করছিল। বোমার শব্দ পেয়ে তারা কাজ বন্ধ করে লাঠিসোটা নিয়ে একজোট হয়ে রাস্তায় নেমে এলে বহিরাগতরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।”

শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক অহিদুজ্জামান অহিদ বলেন, বর্তমানে শ্রমিকরা বন্দরে শান্তির সঙ্গে কাজ করে আসছে। কিন্তু একটি পক্ষ তা ভালোভাবে না নিয়ে ষড়যন্ত্র করে বন্দরের সুন্দর পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে পৌর কমিশনার রাশেদ আলীর মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন তরফদার বলেন, “হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের সৃষ্ট গোলযোগের কারণে বন্দরে লোড-আনলোড কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে আমদানি-রপ্তানি চালু হয়েছে।”