বুধবার ভোর ৪টার দিকে তিনি স্ত্রী ইয়াসমিন হককে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং ভিসির বাংলোর সামনে রাস্তায় শামিয়ানা টাঙিয়ে অনশনে বসা আন্দোলনকারীদের মাঝে উপস্থিত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুই সাবেক শিক্ষক প্রায় দুই ঘণ্টা অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের আশ্বস্ত করেন।
পরে সাংবাদিকদের সামনে জাফর ইকবাল বলেন, “তোমরা আমাকে কথা দিয়েছ, আজকে অনশন ভাঙবে। আমি চাচ্ছিলাম এখনি ভাঙাতে; কিন্তু তোমরা সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে ভাঙবে।
“তোমরা কথা দিয়েছ তো? ঠিক করে বল?”
এ সময় শিক্ষার্থীরা তাতে সায় দিয়ে বলেন- ‘জি স্যার’।
জাফর ইকবাল বলেন, “শোন তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ? তোমরা টের পাচ্ছ না, তোমরা কী করেছ! বাংলাদেশের ৩৪ জন ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন, এখানকার ভাইস চ্যান্সেলর পদত্যাগ করলে তারা পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ, এটা দেখতে। আমাদের দেশে এমন ভাইস চ্যান্সেলর আছে, যাদের আদর্শ এত বেশি যে উনারা অন্যের… দেখে নিজেরা পদত্যাগ করবেন। যদিও আমার ধারণা, এ শখ মিটবে না।“
“কী জন্য তারা এটা বলেছেন, কারণ ওই ৩৪ জন ভাইস চ্যান্সেলর তাদের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। তোমরা যেটা করেছ, আই হোপ, বাংলাদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোর একটা মোডিফিকশন, সবাই এখন নতুন করে অ্যানালাইসিস করবে। আমি যে এই মানুষটাকে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে পাঠিয়েছি; উনি কি ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার উপযুক্ত। আমি অনেক কিছু জানি; কিন্তু এখন আর আমি পাবলিকলি এটা বলতে চাই না। নিজেদের দুর্বলতার কথা বলতে ভাল লাগে না।”
“আমি শুধু এটা বলতে চাই, তোমরা যেটা করেছ, সেটার তুলনা নেই। তোমরা যে আন্দোলনটা তৈরি করেছ, বাংলাদেশের প্রতিটি ইয়াং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে।”, বলেন জনপ্রিয় এই লেখক।
তিনি আর বলেন, “আমার সঙ্গে অনেক বড় বড় মানুষ যোগাযোগ করেছেন। তারা আমাকে কথা দিয়েছেন। এজন্য আমি এখানে এসেছি।”
এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের টানা পাঁচদিন চিকিৎসা সেবা দেওয়া সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশরা সোমবার ফিরে যান। ফলে তাদের অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এখানে যে ডাক্তাররা শুধু নেই তা না; তাদেরকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে দূর করে দেওয়া হয়েছে। এর চাইতে বড় অমানবিক ব্যাপার আর কি হতে পারে? এটা হচ্ছে, অলমোস্ট ছেলেদের মার্ডার করার সুপরিকল্পিক পরিকল্পনা। অনেকের ফুসফুসে পানি চলে আসছে, এটা তো সুপার মেডিকেল ইমাজেন্সি। কিন্তু তাদেরকে সাহায্য করা যাবে না, মেডিকেলি হেলপ করা যাবে না। এর থেকে বড় অমানবিক ব্যাপার আমি তো আমার জীবনে শুনি নাই।”
“আমরা যদি এই ছেলেমেয়েগুলোর অনশন ভাঙাইতে পারি, তাহলেও তাদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে অনেক সময় লাগবে”, যোগ করেন জাফর ইকবাল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। এর জেরে পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডে শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হন। সে ঘটনায় পুলিশ ‘গুলি বর্ষণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিটের অভিযোগ’এনে অজ্ঞাতপরিচয় ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা অনশনে যান; ঘোষণা দেন উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার।