তার অপসারণের দাবিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের মধ্যেই সোমবার বেলা ১১টা ৫৯ মিনিটে অধ্যাপক ফরিদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে ফোন করেন।
পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন, সেজন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মাধ্যমে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।”
“তিনি বলেন, তার বক্তব্য সম্পাদনা (এডিট) করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সংশ্লিষ্ট সকলেই আহত হয়েছেন। তিনি এ বিষয়টি অনুধাবন করছেন।
“তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদার ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।”
যোগাযোগ করা হলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উপাচার্যের সাথে আমার কথা হয়েছে। আমার কণ্ঠে যে অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে সেটি এডিট করা হয়েছে। যা হয়েছে তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
কোনো একটি মহল শিক্ষার্থীদের ‘উসকে দেওয়ার জন্য’ এই বক্তব্য ‘এডিট’ করেছে বলে মন্তব্য করেন সারা দেশে সমালোচনার মুখে থাকা এই শিক্ষক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শাবি উপাচার্য আমাকে ফোন করেছিলেন, তিনি জাবি ছাত্রীদের নিয়ে অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়া নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছেন। জাবি ছাত্রীদের নিয়ে করা মন্তব্যে দুঃখপ্রকাশ করেছেন। যে রেকর্ডটি ফাঁস হয়েছে সেটি পুরো সত্য নয় বলেও তিনি আমাদের জানিয়েছেন।”
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা।
এসময় তাদের তিনটি দাবির মধ্যে ছিল- প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগ, হলের অব্যবস্থাপনা দূর করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং দ্রুত ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া।
পরে গত রোববার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
এরপর ওইদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উল্টো উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে আর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনশন শুরু করেন, যা সোমবার ষষ্ঠ দিনে গড়িয়েছে।
ওই আন্দোলন চলার মধ্যেই ভিসির বক্তব্যের একটি অডিও ফাঁস সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জাহাঙ্গীরনগরেও তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘জাগো নারী, জাগো বহ্নি শিখা’ বলেছে, উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনের ক্ষমা চাওয়ার খবরে তারা সন্তুষ্ট নন, তারা তার অপসারণ চান।
এ মঞ্চের মুখপাত্র অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তাপসী দে প্রাপ্তি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ক্ষমা চাওয়া মানে নারী শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়া নয়। শাবিপ্রবির উপাচার্যকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। এরকম নারী বিদ্বেষী উপাচার্য পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।”