উত্তপ্ত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অন্ধকারে

এক দল শিক্ষার্থী চালিয়ে যাচ্ছে আমরণ অনশন, আরেক দল উপাচার্যের বাড়ির বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ কেটে দিয়ে অবস্থান নিয়েছে ফটকে।

শাবি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Jan 2022, 07:03 PM
Updated : 23 Jan 2022, 07:03 PM

এই পরিস্থিতিতে পুলিশি বেষ্টনির মধ্যে রোববার রাত থেকে নিজের বাড়িতে অন্ধকারে রয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ভিসিকে অন্ধকারে রেখে রাতে তারা ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেছে।

এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির নেতারা।

শনিবার রাতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো মীমাংসা হয়নি।

এর মধ্যে রোববার সংসদেও আলোচনা ওঠে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে। উপাচার্য ফরিদ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তা অপসারণের আহ্বান জানান প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

এদিকে ব্যাপক বিরোধিতার মধ্যেও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সমর্থন পাচ্ছেন অধ্যাপক ফরিদ।

সংগঠনের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অধ্যাপক ফরিদের পদত্যাগের যে দাবি তোলা হয়েছে, তা দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের চক্রান্ত মনে করছে তারা।

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদ উদ্দিনকে ২০১৭ সালে সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি।

গত বছরের অগাস্টে দ্বিতীয় মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান তিনি। তার ছয় মাস না পেরোতেই এখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রবল চাপে রয়েছেন অর্থনীতির এই শিক্ষক।

এই আন্দোলনের শুরু গত সপ্তাহে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হল থেকে।

অসদাচরণের অভিযোগ তুলে গত ১৩ জানুয়ারি রাতে আন্দোলনে নামেন ওই হলের শিক্ষার্থীরা। ১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

সেদিন বিকালে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েনের প্রতিবাদ করলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেয় পুলিশ। ধাওয়া-পাল্টার এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা করে, কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত আহত হন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিলেও তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। পুলিশ ২০০ থেকে ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করলে আরও জোরদার হয় আন্দোলন।

উপাচার্যের বাড়ির সামনের ফটকে রোববার বিকালে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।

ফটকে অবস্থান, বিদ্যুৎ-পানি বন্ধ

ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাড়ির কাছেই আমরণ অনশন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে অনশনরতদের সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীরাও অবস্থান নিয়ে আছেন পাঁচ দিন ধরে।

রোববার শিক্ষার্থীদের একটি দল উপাচার্যের বাড়ির ফটকে অবস্থান নেন, সেখানে আগে থেকে পুলিশ অবস্থান নিয়ে ছিল।

২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী বিকাল পৌনে ৫টায় উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান। আড়াই ঘণ্টা পর তারা সেখানে বসে পড়েন।

শিক্ষার্থীদের অবস্থানের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এক কর্মকর্তা বলেন, “ভেতরে আমাদের স্যার (পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) আছেন। তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনিই এসব ব্যাপারে কথা বলবেন।”

শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না। সাংবাদিকদেরও তারা ঢুকতে দেয়নি।

ফটকে অবস্থান নেওয়ার পর আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমের সামনে একটি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো হয়।

সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, “আমরা চার-পাঁচ দিন ধরে ভিসির বাসভবনের সামনে বসে আছি। আমরা দেখছি যে, ক্রমাগত লোকজন ভিসির বাসভবনে ঢুকছেন, বের হচ্ছেন, ভিসি তাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

“এটা আসলে আমরা মেনে নিতে পারছি না। উপাচার্য এসে একবারও আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। এরপর আমরা তার চেহারা আর দেখতে চাই না।”

তিনি বলেন, “আমরা চাই যে, আমাদের চোখের সামনে দিয়ে এই ভিসির বাসভবনের ভেতরে যাতে আর কোনো মানুষ প্রবেশ না করে। আমরা চাই যে, আমরা যে জায়গায় অবরুদ্ধ হয়ে বসে আছি, তিনিও এরকম অবরুদ্ধ হয়ে বসে থাকুন।”

আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী নাফিসা আনজুম বলেন, “আমরা চাই না কোনো শিক্ষক বা ব্যক্তিবিশেষ কেউ তার সঙ্গে দেখা করুক। আমাদের শিক্ষার্থীরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন, আর উনি (উপাচার্য) উনার বাসভবনে বসে সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন, সব মানুষজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করবেন- সেটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।”

আন্দোলনকারী ইয়াছির সরকার বলেন, “পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমরা আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।”

এর কিছুক্ষণ পর সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্যের বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আন্দোলনকারী বলেন, “আমাদের অনশনরত ভাইবোনেরা কষ্ট করছেন; আর ভিসি ওদিকে আরাম-আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন। এটা আমরা মেনে নিতে পারছি না।”

উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরপরই বাসভবন সংলগ্ন অতিথি ভবন ও শিক্ষক ডরমেটরির বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের ঘটনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস কথা বলছিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “এ মুর্হূতে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।”

রোববার রাতে উপাচার্যের কুশপুতুল পোড়ায় শিক্ষার্থীরা।

এরপর রাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। মিছিল শেষে রাত সাড়ে ১০টায় ক্যাম্পাসের মুক্ত মঞ্চে উপাচার্য ফরিদের কুশপুতুল দাহ করে তারা।  

সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর সেই মিছিল থেকে উপাচার্য ফরিদের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

মিছিল শেষে মোহাইমিনুল বাশার রাজ আন্দোলনরতদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ভিসির বাসভবনের বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছি।

“আমরা সবাই যাতে রাতে ক্যাম্পাসে থাকি। কেউ যাতে চলে না যাই। ভিসি পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থাকব সবাই।”

এদিকে রোববার দিনব্যাপী ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবন ও একাডেমিক ভবনের দেয়ালে দেয়ালে প্রতিবাদী গ্রাফিতি ও স্লোগান আঁকে শিক্ষার্থীরা, আঁকা হয় সড়কেও।

এতে যুক্ত এক শিক্ষার্থী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আমাদের দাবিতে অনড় ছিলাম, আছি, থাকব। পিছপা হওয়ার সুযোগ এখন আর নেই।”

পাঁচ দিন ধরে অনশনে রয়েছে শিক্ষার্থীরা; রোববার তাতে যোগ দিয়েছে আরও কয়েকজন।

অনশনে আরও ৫

আমরণ অনশনকারীদের সঙ্গে রোববার আরও পাঁচজন শিক্ষার্থী যোগ দিয়েছে; এ নিয়ে অনশনরতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৮ জনে।

এই কর্মসূচি শুরুর শুরুর পঞ্চম দিন সন্ধ্যায় স্বেচ্ছাসেবক সবুর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনশনকারীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৬ জন। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনকারী আছেন ১২ জন।”

হাসপাতালে ভর্তি ১৬ জনের মধ্যে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটজন এবং জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন আটজন।

সবুর বলেন, “গণঅনশনের ঘোষণা দেওয়ার পর নতুন করে আরও পাঁচজন আমরণ অনশনে বসেছেন। আরও অনেকেই বসবেন।”

গত বুধবার বিকাল ৩টায় মোট ২৪ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। এর মধ্যে নয়জন ছাত্রী এবং ১৫ জন ছাত্র। একজন অনশনকারীর বাবা গুরুতর অসুস্থ হলে তিনি প্রথম দিনই গ্রামের বাড়ি চলে যান। গত ২৪ ঘণ্টায় এদের সঙ্গে আরও পাঁচজন যুক্ত হন।

এদিকে বৃষ্টির পূর্বাভাস পেয়ে অনশনকারীদের জন্য কাঠের চৌকির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রোববার বিকাল ৩টা থেকে ভিসির বাসভবনের সামনে ছয়টি ছোট-বড় কাঠের চৌকি আনা হয়।

উদ্বিগ্ন শিক্ষক সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের বিবৃতি  

উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের ‘এখতিয়ারভুক্ত’ উল্লেখ করে এ বিষয়ে ‘অতি দ্রুত পদক্ষেপ’ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে সভাপতি অধ্যাপক তুলসী কুমার দাস সাংবাদিকদের সামনে এসে শিক্ষক সমিতির এ প্রস্তাবের কথা জানান।

তার আগে দুপুর আড়াইটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত টানা সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শিক্ষক সমিতির বৈঠক চলে।

বৈঠকের পর সেখানে অন্যান্য নেতার উপস্থিতিতে সভাপতি চারটি সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন।

>> শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর বর্বরোচিত পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন। অবিলম্বে সরকার কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দায়ীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ।

>> অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর জন্য যা যা দরকার তা অনতিবিলম্বে করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সহযোগিতা কামনা।

>> উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত। এক্ষেত্রে অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

>> শিক্ষার্থীদের প্রতি কোনোরকম সহিংসতায় সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল গত শনিবার রাতে ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।

সে বিষয়ে তুলসী দাস বলেন, “শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা কখনই কাম্য নয়। মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা বিষয়টি তুলেছি। শিক্ষামন্ত্রীও বলেছেন, এই ধরনের হামলা কখনই কাম্য নয়।”

ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক চিত্র।

এদিকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে দেশের প্রায় অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি এক ‘জরুরি সভা’ করে।

সে সভার দুই দিন পর রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “নীতি বহির্ভূতভাবে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে এখন যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তোলার মাধ্যমে দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার একটি চক্রান্তের অংশ বলেই প্রতিভাত হচ্ছে।”

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি ও ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন বলে জানানো হয়েছে।

প্রাধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের ‘অনভিপ্রেত’ ঘটনায় আহতদের প্রতিও সহমর্মিতা জানানো হয় বিবৃতিতে।

একইসঙ্গে বলা হয়, “বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী হলে একজন নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হলেও উপাচার্যসহ তার পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখার মাধ্যমে যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানের উপর জোর দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ।

ক্যাম্পাসজুড়ে রয়েছে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিনকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক চিত্র।

সংসদে দাবি, পদত্যাগ না করলে অপসারণ

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ না করলে তাকে অপসারণের দাবি জাতীয় সংসদে তোলেন জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকারও সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা অনশনে আছে। ১৬ জন ইতোমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেছে। কিন্তু কারও টনক নড়ছে না। শুনলাম আজকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী আছেন, বলছিলেন তোমরা তোমাদের দাবি-দাওয়া রেখে ঢাকায় আস, আমার সাথে আলোচনা করতে।

“আমরা সবাই ছাত্র আন্দোলন করে এসেছি। আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে কখনও কোনো ছাত্র দেখা করতে ঢাকায় আসবে না, এটা আমরা জানি। মন্ত্রীর উচিৎ ছিল ডাবল মাস্ক পরে ওখানে যাওয়া।”

উপাচার্য ফরিদ এখনও দায়িত্ব না ছাড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন এক সময়ের ছাত্রনেতা ফিরোজ রশীদ।

তাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, “আমরা মনে করি, আর কোনো তদন্ত রিপোর্ট নয়, কারও সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা নয়, ভাইস চ্যান্সেলরকে আজকের মধ্যে প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে হবে।

জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ পীর ফজলুর রহমানও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্যের অপসারণ দাবি করেন।

তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছেন। কিন্তু এই ভিসি নির্লজ্জের মতো, সব আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে বসে আছেন। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাকে চায় না, কিন্তু তিনি লখিন্দরের বাসরের মতো তার বাসাকে বানিয়ে সেখানে আছেন। উনার যদি বিন্দুমাত্র আত্মসম্মানবোধ থাকত, তাহলে উনি এখান থেকে সরে আসতেন।”