সিনহা হত্যা মামলার ‘রায় হতে পারে এ মাসে’

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় এ মাসের শেষ দিকে রায় আসতে পারে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2022, 02:16 PM
Updated : 11 Jan 2022, 02:16 PM

মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর এই সম্ভাবনার কথা জানান কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারে ‘পুলিশের গুলিতে’ নিহত হন সিনহা। এ ঘটনায় আদালতে র‌্যাবের দেওয়া অভিযোগপত্র অনুযায়ী টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পুলিশের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনের বিচার চলছে ওই আদালতে।

পিপি ফরিদুল সাংবাদিকদের বলেন, “বুধবার মামলার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ হবে আশা করছি। আর চলতি মাসের শেষের দিকে মামলার রায় ঘোষণার আশা করা হচ্ছে।”

গত তিন দিন ধরে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের তৃতীয় দিনে প্রধান আসামি লিয়াকত আলীর আইনজীবীর পর ওসি প্রদীপের আইনজীবী আসামির পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করলেও তা অসমাপ্ত রয়েছে।

পিপি ফরিদুল বলেন, বুধবার আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে যুক্তি-তর্ক পর্বে চতুর্থ দিনের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হবে।

মামলার বাদী-আসামি উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের জন্য ৯ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত বিচারিক কার্যক্রমের দিন ধার্য রয়েছে।

পিপি ফরিদুল বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আদালতে যুক্তি-তর্ক পর্বে প্রধান আসামি লিয়াকত আলীর আইনজীবী চন্দন দাশের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। বেলা ১২টার দিকে তার যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। এরপর আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। আদালতের কার্যদিবসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেও ওসি প্রদীপের আইনজীবীর যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষ করা সম্ভব হয়নি। তিনি (রানা দাশগুপ্ত) অপরাপর যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের জন্য আদালতের কাছে আরও সময় প্রার্থনা করেছেন। বুধবার তিনি অসমাপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করবেন।

ফরিদুল বলেন, ওসি প্রদীপের পক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন শেষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি খণ্ডন করে বক্তব্য দেবেন।

“আশা করছি, বুধবার বিচারিক কার্যক্রমের শেষ দিনে প্রশ্নোত্তর পর্বের ইতি টানা সম্ভব হবে এবং চলতি মাসের শেষের দিকে মামলার রায় ঘোষণা করা সম্ভব হবে।”

এর আগে যুক্তি-তর্ক পর্বের প্রথম দিন ছয় আসামির এবং দ্বিতীয় দিন সাত আসামির আইনজীবী নিজেদের পক্ষে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

মামলার বিচারিক কার্যক্রমে ৮ দফায় গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং তাদের জেরা শেষ হয়েছে।

সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হওয়ার পর কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আসামিদের বক্তব্য গ্রহণ করে আদালত। একই সঙ্গে ৯ জানুয়ারি রোববার থেকে আগামী ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তি-তর্কের জন্য দিন ঠিক করে আদালত।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের শামলাপুর চেকপোস্টে ‘পুলিশের গুলিতে’ নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে।

ওই বছর ৫ অগাস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয় পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

একই বছর ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা র‍্যাব ১৫-এর জেষ্ঠ্য সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।

গত ২৭ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।

এরপর গত ২৩ অগাস্ট শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ, যা শেষ হয় গত ১ ডিসেম্বর। গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ৩৪২ ধারায় গ্রহণ করা হয় আসামিদের বক্তব্য।

আরও পড়ুন