পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি

কক্সবাজারের টেকনাফের শামলাপুর চেক পোস্টে পুলিশের গুলিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2020, 04:50 PM
Updated : 1 August 2020, 06:05 PM

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে আহ্বায়ক করে গঠিত তিন সদস্যের এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।

কক্সবাজার জেলার একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি এই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন।

জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহে এলিদ মইনুল আমিনের স্বাক্ষরে এক আদেশে শনিবার সন্ধ্যায় এই তদন্ত কমিটি করার কথা জানানো হয়।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান

নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বীর হেমায়েত সড়কের মৃত এরশাদ খানের ছেলে।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়।

কক্সবাজারের পুলিশ বলছে, রাশেদ তার পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেক পোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাকে গুলি করে।

ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি এ ঘটনায় আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করে দুটো মামলা দায়ের করার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।

তবে ঘটনার যে বিবরণ পুলিশ দিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠনের ওই ঘোষণা আসে।

মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, কমিটি ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে মতামত দেবে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ একটি তথ্যচিত্র নির্মাণের কথা বলে গত প্রায় একমাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। সেখানে একজন নারী এবং তিনজন পুরুষ ছিলেন তার সঙ্গে।

শুক্রবার রাতের ঘটনার বিষয়ে তার ভাষ্য, শামলাপুরের পাহাড়ি এলাকায় ‘রোহিঙ্গা ডাকাত দল’ হাকিম বাহিনীর আস্তানায় ‘সশস্ত্র লোকজনের আনাগোনা’ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।

“তারা জানায়, ওই পাহাড়ি এলাকা থেকে বোরকা পরিহিত দুই লোককে নেমে এসে একটি প্রাইভেট কার নিয়ে মেরিন ড্রাইভের দিকে যেতে দেখেছে তারা।”

ওই খবরে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর এলাকার পুলিশের চেকপোস্টে সতর্কতা বাড়ানো হয়।

পুলিশ সুপার বলেন, “একটি গাড়ি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় তল্লাশির জন্য সেটি থামায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা। ওই গাড়ির দুজনের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর হিসেবে পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন।

“এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তারা তর্ক-বিতর্কে জড়ায়। এক পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি পিস্তল বের করে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করার চেষ্টা চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ তখন গুলি ছোড়ে। এতে ওই ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হন।”

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন।

তিনি বলেন, পুলিশ ওই গাড়ি থেকে জার্মানিতে তৈরি একটি পিস্তল, নয়টি গুলি, ৫০টি ইয়াবা, দুটি বিদেশি মদের বোতল এবং চার পোটলা গাঁজা উদ্ধার করেছে। ওই গাড়িতে থাকা অন্যকজন এবং নীলিমা রিসোর্ট থেকে আরও একজনকে গ্রোপ্তার করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় টেকনাফ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করা হলেও গ্রেপ্তার দুজনের নাম-পরিচয় পুলিশ প্রকাশ করেনি।