অভিজিৎ হত্যায় দণ্ডিত জিয়াউল হক দেশে নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

অভিজিৎ রায়ের খুনি জঙ্গিনেতা সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া বাংলাদেশে রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র ধারণা করলেও তা নাকচ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2021, 12:47 PM
Updated : 21 Dec 2021, 01:18 PM

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জিয়া ও আকরাম হোসেন অন্য কোনো দেশে পালিয়ে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া এবং তার সঙ্গী আকরামের বিষয়ে তথ্য দিলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সোমবার ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণার পর নতুন করে আলোচনায় আসে তাদের নাম।

পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের আওতাধীন ‘রিওয়ার্ড ফর জাস্টিস’ (আরএফজে) প্রোগ্রাম বলেছে, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা এখনও বাংলাদেশে রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার বিকালে মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “আমাদের কাছে যতটুকু তথ্য আছে, তারা (জিয়া ও আকরাম) দেশে নেই। তারা অন্য দেশে গা ঢাকা দিয়েছেন। যত দ্রুত সম্ভব তাদের ধরে এনে রায় কার্যকর করা হবে। এ জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পর এ বছর দেওয়া রায়ে জিয়া ও আকরামসহ পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় বাংলাদেশের আদালত।

দণ্ডিত মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস গ্রেপ্তার হলেও জিয়া ও আকরাম শুরু থেকে পলাতক। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, জিয়া এই জঙ্গি দলের সামরিক শাখার প্রধান।

২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। তখন অভ‌্যুত্থানচেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম।

তখন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।

বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের ছদ্মবেশ এই রকম হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা

২০১৬ সালে গুলশান হামলার পর জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সরকার। তখন পুরস্কার ঘোষিত তামিম চৌধুরীসহ জঙ্গিদের কয়েকজন শীর্ষনেতা র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে নিহত হলেও জিয়ার খোঁজ মেলেনি।

২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানই সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “জিয়ার অনুসারীদের প্রায় সকলকে ধরা হয়েছে। জিয়ার প্রতিও আমাদের নজরদারি রয়েছে। আমরা তাকে ফলো করছি। যে কোনো সময় হয়ত আমাদের নেটওয়ার্কে এসে পড়বে।”

তারপর তিন বছর আর কোনো খবর না মেলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পুরস্কার ঘোষণার পর আসাদুজ্জামান বললেন, জিয়া দেশে নেই।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায়কে হত্যার পর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যামামলায়ও জিয়া ও আকরাম মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত। তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশও রয়েছে আদালতের।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের সামনে মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর্য উদ্বোধন করতে গিয়ে জিয়াকে নিয়ে সাংবাদিককের প্রশ্নের মুখে পড়েন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি ২০১৫-১৬ সময়ের প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ব্যর্থ করে দিয়েছিল।”

মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য উদ্বোধন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন প্রধান অতিথি। মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মহীউদ্দীনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিষদের সদস্য সালাম চৌধুরী।

অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা-২০ আসনের সাংসদ বেনজীর আহমদ, মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ নাঈমুর রহমান দুর্জয়, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান।

মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের অর্থায়নে হরিরামপুর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ১০ ফুট উচ্চতার রণাঙ্গনে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।