নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল ৪ জনের

নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে তিন ভাইবোনসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে।

নীলফামারী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2021, 05:11 AM
Updated : 8 Dec 2021, 04:31 PM

বুধবার সকাল ৮টার দিকে সদর উপজেলার কুন্দরপুর ইউনিয়নে বউবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে নীলফামারী সদর থানার ওসি আব্দুর রউপ জানান।

নিহতরা হল: বউবাজার এলাকার রিকশা চালক রেজওয়ান আলীর দুই মেয়ে লিমা আক্তার (৭), শিমু আক্তার (৪)ও ছেলে মমিনুর রহমান (৩) এবং একই গ্রামের প্রয়াত আনোয়ার হোসেনের ছেলে সালমান ফারাজী শামীম (২৬)।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে বাড়ির পাশে নির্মাণাধীন রেল সেতুতে দাঁড়িয়ে ট্রাক্টর থেকে ইট নামানো দেখছিল ওই তিন ভাইবোন। এ সময় নীলফামারী স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী রকেট মেইল ট্রেনটি তাদের কাছাকাছি চলে এলে দেখতে পান প্রতিবেশী যুবক সালমান ফারাজী শামীম।

দুর্ঘটনা আঁচ করতে পেরে সালমান ফারাজী শামীম ছুটে যান ওই তিন ভাইবোনকে বাঁচাতে। কিন্তু তাদেরেকে বাঁচানোর আগেই ট্রেনটি তাকেসহ ওই তিন শিশুকে ধাক্কা দেয়।

এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলে নিহত হয় শিশু লিমা আক্তার ও শিমু আক্তার। গুরুতর আহত হয় লিমা-শিমুর ছোট ভাই মমিনুর এবং সালমান ফারাজী শামীম। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।

সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুর রহমান বলেন, চার জনের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তাদের পরিবারের অভিযোগ না থাকায় বেলা ১টার দিকে দাফনের জন্য স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

এই ঘটনার পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নীলফামারী স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী আন্তঃনগর রূপসা এক্সপ্রেস যাওয়ার সময় সেটি আটক করে বিক্ষোভ এবং ট্রেনটিতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এলাকাবাসী।

খবর পেয়ে নীলফামারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুদ্ধ লোকজনকে শান্ত করেন। এক ঘণ্টা বিলম্বে বেলা ১১টার দিকে রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

নীলফামারীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বলেন, ওই স্থানে একটি অরক্ষিত রেল গেট রয়েছে। গেটম্যান ও রেল ক্রসিং না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। গেট ম্যান নিয়োগ ও রেল ক্রসিং স্থাপনের দাবিতে স্থানীয়রা বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্তঃনগর রূপসা ট্রেন আটক করেছিল।

“আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আশ্বস্ত করায় তারা শান্ত হন। পরে ওই পথ দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।”

নিহত তিন শিশুর দাদা আব্দুল কুদ্দুস (৭০) বলেন, “ঘটনার সময় আমি ওই রেল ব্রিজের পাশে থাকা ক্ষেতে কাজ করছিলাম। এ সময় হঠাৎ ট্রেন ধাকায় ব্রিজের উপর থেকে একটি বড় ছেলে ও ছোট বাচ্চা আমার সামনে এসে পড়ল। ছোট ছেলেটাকে একজনের কোলে দিয়ে আমি ওই যুবক ছেলেকে উঠানোর চেষ্টা করি। এর পরপরই দেখি আরও দুটি ছোট বাচা পড়ে রয়েছে। আমি তখনও বুঝিতে পারিনি ওই তিন বাচ্চা আমার নাতি-নাতনি।”