মামুন মৌলভীবাজারের রাজনগরের কাজীরহাট গ্রামের বাসিন্দা। মৌলভীবাজার বন আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান সোমবার সাজা হিসেবে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
মৌলভীবাজারের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, ২০২০ সালের নভেম্বর মেছো বিড়ালটি মামুনের বাড়ির পুকুরের মাছ খেয়ে ফেলে। এ সময়ে মামুনের নজরে পড়লে তিনি সহযোগীদের নিয়ে মেছো বিড়ালটিকে হত্যা করেন। মেছো বিড়ালটিকে হত্যার একটি ভিডিও ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ফরেস্টার মো. আনিসুজ্জামান বাদী হয়ে রাজনগর থানায় বন আইনে মামলা করেন। ঘটনাটি তদন্ত করে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পুলিশ বন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
“প্রায় এক বছর পর আদালত মামুনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা হিসেবে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে।”
মামুন মিয়া আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন বলে বন বিভাগের বন মামলা পরিচালক জুলহাস উদ্দিন জানিয়েছেন।
শ্রীমঙ্গলের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, মেছো বিড়াল হত্যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আগে সাপ, বানর হত্যার ঘটনায় আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সাজা দেওয়া হয়েছে।
“মৌলভীবাজারে মেছো বিড়াল হত্যা নিয়ে কোনো মামলায় এই প্রথম জরিমানা করা হয়েছে। যা আগামীতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, “এ অঞ্চলে ‘মেছো বিড়ালকে’ মানুষ ‘মেছো বাঘ’ বলে। বাঘ নামটা শুনলে আসলে মানুষের মধ্যে ভয় চলে আসে। মানুষ এদের দেখলে ভয় পেয়ে এদের মেরে ফেলতে চায়। এই মেছো বিড়ালের প্রিয় খাবার হচ্ছে মাছ। যে কারণে তার নামের সাথে মেছো শব্দটি সংযুক্ত।
তিনি জানান, রাজনগরের কাউয়াদিঘি হাওর, শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে হাইল হাওর এবং কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখায় হাকালুকি হাওরের উপরের অংশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং গ্রামে গঞ্জে জলাশয় কমে যাওয়ায় এ প্রাণীগুলোর খাদ্যের তালিকা থেকে মাছ কমে এসেছে । এ কারণে তারা অনেক সময় লোকালোয়ে এসে বাসাবাড়ির হাঁস-মোরগ ধরে খায়। এতে অনেক সময় মানুষের হাতে তাড়া খেয়ে মারা পড়ে।