‘আমি আর কতবার মারা যাব’, প্রশ্ন দিপেন্দ্রনাথ সাহার

ভুলটা ছিল নির্বাচন কমিশনের, ছয় বছর আগে সংশোধনের আবেদন করেছিলেন নাটোরের দিপেন্দ্রনাথ সাহা; কিন্তু ভোটার তালিকায় এখনও তার নামের পাশে ‘মৃত’ লেখা থাকায় এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।

নাটোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2021, 07:26 AM
Updated : 29 Nov 2021, 08:53 AM

৫২ বছর বয়সী দিপেন্দ্রনাথ লালপুর শ্রী সুন্দরী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক। ভোটার তালিকায় কেন তাকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে, তা ‘জানেন না’ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

রোববার দেশের যে এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে লালপুর উপজেলার লালপুর ইউনিয়ন পরিষদ একটি দিপেন্দ্রনাথ সেখানকারই ভোটার।

লালপুর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, ভোটার তালিকায় এখনও তিনি ‘মৃত ব্যক্তি’। ফলে ভোট না দিয়েই তাকে ফিরে আসতে হয়।

কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার সময় কথা হয় দিপেন্দ্রনাথের সঙ্গে। বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, জীবনে বহুবার তিনি ভোট দিয়েছেন। শিক্ষক হিসেবে ভোট গ্রহণের দায়িত্বও পালন করেছেন। কিন্তু অদ্ভূত এক কারণে এখন তাকে এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। 

এই শিক্ষক জানান, ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন- নির্বাচন কমিশনের কাগজপত্রে তিনি এখন ‘মৃত’ ব্যক্তি। সেই ঘটনায় তিনি হতবাক হয়ে যান।

তখনই তিনি লালপুর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা সংশোধনের লিখিত আবেদন করেন।কিন্তু ওই ভুল কীভাবে ঘটল তা তাকে জানাতে পারেনি কমিশন।

দীর্ঘ তিন বছর নির্বাচন অফিসে ঘোরাঘুরি করে ২০১৮ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে ‘মৃত থেকে জীবিত’ হন দিপেন্দ্রনাথ।

সে সময় তাকে আশ্বস্ত করা হয়, নির্বাচন কার্যালয় থেকে ভোটার তালিকাও সংশোধন হয়ে যাবে, তখন তিনি ভোটও দিতে পারবেন।

“তিন মাস আগেও লালপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেছি।উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাসিব বিন সাহাব আমাকে বলেছিলেন, ‘চিন্তা করবেন না।আপনি ভোট দিতে পারবেন’।” 

ওই কর্মকর্তার কথায় ভরসা রেখেই রোববার লালপুর ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে ইউপি নির্বাচনের ভোট দিতে গিয়েছিলেন এই শিক্ষক।

“কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর কর্তব্যরত নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ভোটার তালিকায় আমাকে মৃত দেখানো আছে।আমাকে ভোট দিতে দেওয়া যাচ্ছে না।”

দীপেন্দ্রনাথ ভোটকেন্দ্রে দাঁড়িয়েই ফোন করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাসিব বিন সাহাবকে। জানতে চান, কেন ভোটার তালিকায় তার তথ্য সংশোধন হল না। কিন্তু কোনো সদুত্তর মেলেনি।

এই শিক্ষক বলেন, ছয় বছর আগে যখন নির্বাচন কমিশন তাকে কাগজে কলমে ‘মৃত’ দেখাল, তখন বেতন-ভাতা তোলা ও পাসপোর্ট পাওয়া নিয়ে নানা ভোগান্তি তাকে পোহাতে হয়েছে।

“তিন বছর ঘোরাঘুরির পর নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকায় এখনও আমাকে ‘মৃত’ দেখানো হচ্ছে। এভাবে আমি আর কতবার মারা যাব?”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাসিব বিন সাহাব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সার্ভারে এনআইডি সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভোটার তালিকা কেন সংশোধন হল না তা তিনি ‘বুঝতে পারছেন না’। ভোটার তালিকা হালনাগাদ তিনি নিজেই করেছেন।

তাহলে এর দায় কার- এমন প্রশ্নে তার উত্তর, “ভোটের পর আমি খোঁজ নিয়ে এর কারণ জানার চেষ্টা করব। কথা দিচ্ছি, এবার আমি ভোটার তালিকা খুব দ্রুতই ঠিক করে দেব।”